খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (আইএ) মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ধৃষ্টতার সীমা ছাড়িয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে আইএ’র প্রচারণার বিরুদ্ধে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তুরিন আফেরোজ বলেন, ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ধৃষ্টতা ছাড়িয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়েছে। যারা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন। এটি একটি স্বীকৃত অধিকার। এ জন্য তাদের অপরাধ কি, তা কিন্তু বোধগম নয়।’
তিনি বলেন, ‘এ্যামনেস্টি যুদ্ধাপরাধীদের মানুষ বলে মনে করে, কিন্তু ৩০ লাখ শহীদ, চার থেকে পাঁচ লাখ বীরঙ্গণাকে মানুষ বলে মনে করে না। এক কোটি উদ্বাস্তু, যারা সে সময় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, তাদের মানুষ বলে মনে করে না। তাদের যদি মানুষ মনে করতো, তাহলে এ বিষয়ে বিবৃতি দিত।’
তিনি বলেন, ‘যখন পেট্রোল বোমায় সাধারণ মানুষ মারা যায়, তখন তাদের কোনো জোরালো বক্তব্য দেখতে পাওয়া যায় ন্।া ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ওপর হামলা হয়, সেটি তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করে ন্।া তাদের একপেশে মানবাধিকার চর্চার আমরা প্রতিবাদ জানায়।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘তারা যদি মনে করে এ বিচারে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তাহলে আদালতের পথ খোলা রয়েছে, আইন আছে, তারা যেতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার হচ্ছে, তার আর প্রমাণ দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক মহল আজ স্বীকার করে, বাংলাদেশ এ বিচারের মাধ্যমে নিদর্শন স্থাপন করেছে। এরপরও তারা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এটি জঘন্য প্রয়াসমাত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্র ও ব্যক্তির নয়, আন্তর্জাতিক মহলেরও রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চর্চা ও মানবাধিকর নিয়ে কথা বলবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা। তবে যে বিচার হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা করে থাকলে তাতে কিছু বলবার নেই। বরং উপকৃত হবো, বিচার প্রক্রিয়াকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু যদি তাদের বক্তব্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর অপ্রয়োজনীয় হস্তপেক্ষপ বলে মনে হয়, তবে অবশ্যই আমরা বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করব। সে ধারাবাহিকতায় সেক্টর ফোরাম তাদের বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
৪ নভেম্বর সেক্টর ফোরামের পক্ষ থেকে আইএ’র সেক্রেটারি জেনারেল বরাবর একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়। সেখানে তাদের বিবৃতি প্রত্যাহার ও সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদ পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হারুণ হাবীব বলেন, ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করেছে। কেননা, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন বিষয়ের উপর বিবৃতি দিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। ৪ নভেম্বর প্রতিবাদের কপ্ িএ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বরাবর পাঠিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভাইস-চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, লে. জেনারেল (অব.) এম হারুণ অর রশীদ, আনোয়ার উল আলম শহীদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।