Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৫: সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে র‌্যাবের ‘বড় অর্জন’ বলে দাবি করেছেন বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ ফেরত দেওয়ার এক দিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরে নূর হোসেনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এরপর র‌্যাব হেফাজতে শুক্রবার সকালে তাকে ঢাকার উত্তরায় র‌্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর নূর হোসেনকে সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।
শুক্রবার ফেইসবুকে জিয়াউল আহসান লিখেছেন, “ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনা র‌্যাবের বড় অর্জন।”
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নূর হোসেনকে ফেরতের পুরো প্রক্রিয়ায় র‌্যাব জড়িত ছিল বলে দাবি করেন জিয়াউল।
তিনি বলেন, “নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের জন্য সীমান্তে সাত দিন ধরে ওঁৎ পেতে ছিল আমাদের সদস্যরা। যখন জানা গেল (নূর হোসেন) ওপারে চলে গেছে এবং একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে, তখন আমরা সেখানে সোর্স নিয়োগ করি।
“তার মাধ্যমে বাসা চিহ্নিত করে তাকে গ্রেপ্তারে ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছি।”
গত বছর নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার এই মামলায় র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন বর্তমানে কারাগারে। হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তাদের অনেকে।
এ বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ফেইসবুকে লিখেছেন, “এই বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই এলিট সংস্থাটি ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে সত্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। র‌্যাবই অধিকাংশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে।”
তবে ওই হত্যাকাণ্ডের পর নিহত কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে উল্টো হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার কথা বলেছিলেন জিয়াউল। সে সময় র‌্যাবের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে হাই কোর্ট।
ভারত নূর হোসেনকে ফেরত দেওয়ার পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে র‌্যাবের সদরদপ্তরে কেন নেওয়া হল তা জানতে চাইলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “নিরাপত্তার জন্য বিজিবি তাকে র‌্যাবের হাতে তুলে দিয়েছে।”
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডর কাউন্সিলর নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন নূর হোসেন। এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই নেতা। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে পাসপোর্ট আইনে মামলাও হয়।
শেষ পর্যন্ত দুই সরকারের মতৈক্যে ভারত গত অক্টোবরে ওই মামলা তুলে নেয় এবং আদালত নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয়।
নূর হোসেনকে দুপুরে আদালতে হাজির করার পর বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।