খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: সর্বস্তরের পেশাজীবীদের জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টকে (বি আইপিডি) আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করেছেন প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপসহ বহু শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা এম এ খালেক।
রাজধানীর তোপখানা রোডের ফারইস্ট টাওয়ারে রবিবার সকালে বি আইপিডির প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দেশের অন্যতম শিল্পপতি এম এ খালেক বলেন, কর্মই আমার ধর্ম। কাজটাকে আমি ধর্ম মনে করি। মানুষের মধ্যে আমার কর্ম ছড়িয়ে দেই, এটাই আমার ধর্ম। যে যেখানে আছেন, কর্মের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন। জীবন নশ্বর, একদিন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কর্ম অবিনশ্বর। পৃথিবী যতদিন থাকবে মানুষের কর্ম অবিনশ্বর হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বহু প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছি। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের সেবাদান করছে। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, জীবন বীমা, সাধারণ বীমাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এখানে আমার সামনে যারা বসে আছেন তারাই জাতির গর্ব। আমাদের বিভিন্ন সময়ে নানা সৃষ্টিশীল কাজ করতে উৎসাহিত ও আশান্বিত করেছেন।
এম এ খালেক বলেন, আমার যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে এটা (বি আইপিডি) সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান। যখন দেখলাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মানুষজন শুধু টাকার পিছনে ছুটছে। কিভাবে লক্ষ-কোটি টাকা ছেলে মেয়েদের জন্য রেখে যাবে। কত ধনী হওয়া যাবে। মানুষ একটুও ভাবে না, নশ্বর জিনিস রেখে গিয়ে লাভ নেই। অবিনশ্বর জিনিস রেখে যেতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ইন্স্যুরেন্সসহ যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করে এসেই এ সব প্রতিষ্ঠানে ঢুকছেন। যতই তারা মেধাবী হোক না কেন, যে পেশায় জয়েন করছেন তা কিন্তু তার জন্য নতুন। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করে তাদের প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য, প্রশিক্ষিত করার জন্য বি আইপিডিতে কোর্স শুরু করেছি। আশা করি এই কোম্পানিতে (বি আইপিডি) ভাল প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবাই উপকৃত হবেন।
দেশের অন্যতম এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, আমার বিশ্বাস যেখানে ভাল ভাল শিক্ষক থাকবেন, সেখানে প্রশিক্ষণার্থীরা উপকৃত হবেন। যেখানে ভাল ভাল উদ্যোক্তা থাকবেন, সেখানে ভাল ভাল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। আমিই শুধু সারাদেশে ভাল ভাল প্রতিষ্ঠান গড়ে যাব, কিংবা আমি সারাজীবন বেঁচে থাকব, এটা ঠিক নয়। আমার অবর্তমানে আপনাদের হাল ধরতে হবে।
তিনি বলেন, আমি যতগুলো প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেছি, এর মধ্যে প্রধানতম হল ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ অতি অল্প সময়ের মধ্যে যে সুনামের অধিকারী হয়েছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ভাল কিছু করতে হলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আপনি যদি কিছু না জানেন তাহলে শিখাবেন কিভাবে? বলা হয়ে থাকে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’, আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি ‘সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। শিক্ষা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। চুরি বা ডাকাতিও কিন্তু একটা বিদ্যা। সুতরাং সব শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড নয়।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও বি আইপডির ডিজি কাজী মো. মোরতুজা আলীকে দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা উল্লেখ করে এম এ খালেক বলেন, তাদের প্রতি আমি আশা করব, বি আইপিডি যেন শুধু এজেন্টদের প্রশিক্ষণে ভূমিকা না রাখে। বিভিন্ন সময়ে যেন বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা করে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বি আইপিডিকে গড়ে তোলেন। আমার বয়স হয়েছে। সৃষ্টি আমার ধর্ম। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের পাশেই আছি। বি আইপিডির যাত্রা শুভ হোক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি অথরিটি নতুন যে আইনে আমাদের আবদ্ধ করেছে, প্রত্যেকটি এজেন্ট ট্রেনিং না নিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করবে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের সমগ্র বীমা শিল্প উপকৃত হবে। বীমা কিভাবে সহজভাবে করা যায়, গ্রাহকদের দোরগড়ায় পৌঁছানো যায়- এ ব্যাপারে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কোম্পানিতে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ছিল, আমাদেরও ছিল। সেখান থেকে বি আইপিডি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখানে আজ থেকে ট্রেনিং শুরু হচ্ছে। যারা প্রশিক্ষণ দেবেন তারা বিভিন্ন জায়গায় খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষ বীমাকর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন। যারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিবেন তারা নিজে এবং সমাজের কল্যাণ করতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সভাপতির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বি আইপিডি) মহাপরিচালক (ডিজি) কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, যে স্বপ্ন আমরা দীর্ঘদিন লালন করেছি তা আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবায়ন শেষ হলো মাত্র কয়েক মাস আগে। আমি মনে করি, শুধু বীমা শিল্পের জন্য নয়, পেশাজীবীদের সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ জরুরি। সৃষ্টিশীল মানুষ, উদ্যোক্তা এম এ খালেকের নেতৃত্বে দ্রুততম সময়ে বি আইপিডি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ বি আইপিডিতে প্রশিক্ষণের শুভ সূচনা হল। শুধু ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়, সরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানও আমাদের এখান থেকে তাদের জনবলকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা দেশি-বিদেশি সবাইকে প্রশিক্ষণ দেব। এই প্রশিক্ষণের মান দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তো বটেই, আন্তর্জাতিক মানের হবে।
কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, আমরা (ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স) বাংলাদেশের বীমা জগতের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করতে চাই। শিক্ষার পরে প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ শুধু মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায় না, দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করে। পরিবর্তিত মানুষ হিসেবে আমরা ফিরে যাব। পরিবর্তিত মানুষ হিসেবে সমাজের কল্যাণ করবো।
উদ্বোধনী প্রশিক্ষণ কোর্সে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে বি আইপিডির পরিচালক ড. এম. মোশাররফ হোসেন এফসিএ, বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব এ বি এম নুরুল হক, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান ও বিশেষ অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা।