Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

46খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৫ : বেলজিয়ামে বসবাসকারী ফরাসি নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি দল অত্যন্ত সংগঠিতভাবে প্যারিসে হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করে, যাতে সিরিয়া থেকে শরণার্থীর বেশে গ্রিস হয়ে আসা জঙ্গিরাও রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নিহত সাত হামলাকারী ও পালিয়ে যাওয়া অষ্টম হামলাকারীর বিষয়ে ধীরে ধীরে বিস্তারিত তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে।
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ভাষ্যমতে এই আট হামলাকারীই প্যারিসের কয়েকটি বারে, একটি কনসার্ট হলে এবং ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে হামলা চালিয়ে ১২৯ জনকে হত্যা ও ৩৪৯ জনকে আহত করেছে।
কিন্তু পৃথকভাবে পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে যে ছবি পাওয়া গেছে তাতে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, একটি সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত ‘বহুজাতিক কমান্ডো দল’ হামলাটি চালিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ব্রাসেলসের শহরতলী, গ্রিসের লেরোস দ্বীপ হয়ে ফ্রান্সের গির্জা শহর শাখত এবং সম্ভবত জার্মানি পর্যন্ত এই দলটির চক্র বিস্তৃত।
সন্ত্রাসীদের আন্তর্জাতিক চক্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এ ধরনের হুমকি বন্ধ করার জন্য নতুন কী নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা আলোচনার জন্য ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেওনা ক্যাজনুভ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরুরি বৈঠক তলব করতে যাচ্ছেন।
“বিদেশে বসে ভয়াবহ এই হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, এ জন্য বেলজিয়ামে থাকা একটি দলকে সক্রিয় করা হয় এবং ফ্রান্স থেকে দেওয়া সমর্থনে বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়,” বলে এক সংবাদ সম্মেলনে বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে বলেন ক্যাজনুভ।
প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে হামলার চিত্র ও পরিসংখ্যান। ছবি: রয়টার্স প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে হামলার চিত্র ও পরিসংখ্যান। ছবি: রয়টার্স নিরপরাধ মানুষদের হত্যার জন্য আটজনকে নির্দেশ দিয়ে প্যারিসে পাঠানোর কথা জানিয়েছে আইএস। এই আটজনের মধ্যে চারজন ফরাসি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্যারিসের দক্ষিণপশ্চিম এলাকা শাখতের বাসিন্দা আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ২৯ বছর বয়সী ইসমায়েল ওমর মোস্তেফাই।
যে সাতজন হামলাকারী প্রাণ হারিয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে আত্মঘাতী বোমায় নিজেকে উড়িয়ে দেন তিনি। এই হলেই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে।
ছিচকে অপরাধী থেকে জঙ্গি হয়ে ওঠেন মোস্তেফাই। দ্রুত জঙ্গিতে রূপান্তরিত হওয়ার পথে পরিচিত মহল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১০ সালে বেলজিয়াম থেকে আসা এক উগ্রপন্থি ইমামের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারপর ইসলামি চরমপন্থার দিকে তার ঝুঁকে পড়াকে চিহ্নিত করে তার নামে নিরাপত্তানথি তৈরি করা হয়।
দুই সন্তানের জনক মোস্তেফাই ২০১৩-১৪ সালে সিরিয়া ঘুরে এসেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে।
শনাক্ত করা এই নেটওয়ার্কের অপর ব্যক্তিও ফরাসি নাগরিক। তবে তার জন্ম বেলজিয়ামে। পলাতক ২৬ বছর বয়সী সালাহ আব্দেসালামকে একমাত্র জীবিত হামলাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গুলিবর্ষণের সময় ব্যবহৃত কালো ফক্সভাগেন পলো গাড়িটি তিনিই ভাড়া করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত আরো দুইজনকে ফরাসি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করেছেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা। এদের বয়স ২০ এবং ৩১ বলে জানানো হলেও নাম প্রকাশ করা হয়নি। স্তাদে দে ফ্রঁসে স্টেডিয়াম ও একটি বারে এ দুজন আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এদের মধ্যে একজন আব্দেসালামের ভাই বলে জানিয়েছে ফরাসি বিচার বিভাগের একটি সূত্র।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ইউরোপীয় নাগরিক যোগ দিয়েছে বেলজিয়াম থেকে। এই দেশটি থেকে রোববার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া প্যারিসে আত্মঘাতী হামলায় নিহত দুই জঙ্গি এই দেশটিতে বসবাস করতেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।
প্যারিসের হামলায় ব্যবহৃত গাড়ি দুটিও বেলজিয়ামে নিবন্ধনকৃত। এখান থেকে যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন শুক্রবার সন্ধ্যারাতে প্যারিসে ছিলেন।
স্তাদে দে ফ্রঁসে স্টেডিয়ামের কাছে এক আত্মঘাতীর পাশ থেকে একটি সিরীয় পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
এতে সিরীয় শরণার্থীর বেশে ইউরোপে প্রবেশ করা আইএস জঙ্গির বিষয়টি সামনে এসেছে। পাসপোর্টে পাওয়া উত্তর সিরিয়ার ইদলিবের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী আহমেদ আলমোহাম্মদ অক্টোবর মাসে গ্রিস, সার্বিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আলমোহাম্মদ হামলাকারী কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে বিষয়টি নিশ্চিত হলে ইউরোপের শরণার্থীনীতিতে তা ধাক্কা দেবে এটা পরিষ্কার।
সেপ্টেম্বরে জিহাদি সূত্রগুলো জানিয়েছিল, তারা শরণার্থী সংকটকে ইউরোপে তাদের যোদ্ধা পাঠানোর কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু পশ্চিমা কর্মকর্তারা তখন বিষয়টি আমলে নেননি।
আত্মঘাতীর পাশে সিরীয় পাসপোর্ট ফেলে রেখে এটি আইএসের আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
নভেম্বরের প্রথমদিকে জার্মানিতে গাড়িতে বন্দুক ও বিস্ফোরক পাওয়ার পর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই ব্যক্তিও প্যারিস হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন জার্মান তদন্তকারীরা।
প্যারিস হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এতে তালিকায় আরো কোনো কোনো দেশের নাম যুক্ত হতে পারে।
এভাবে সন্ত্রাসীদের একটি আন্তর্জাতিকচক্র প্যারিস হামলায় জড়িত, সেই ছবিটি স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। এতে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বর্তমান চিত্রটিও চিরতরে পাল্টে যেতে পারে।