Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

33খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ৪-০ গোলে হেরেছে। সাধারণ দৃষ্টিতে এই হার নিয়ে আপনার দুঃখবোধ থাকতে পারে। থাকতে পারে একরাশ হতাশাও। কিন্তু একটু বিশ্লেষণের চোখে তাকালেই বুঝবেন, ম্যাচটা বাংলাদেশের ফুটবলে আলাদা একটা জায়গাই দাবি করছে।
ভ্রু কুঁচকে ফেললেন তো! যে ম্যাচে বাংলাদেশ এক হালি গোল খেয়েছে, সেটাকে কীভাবে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আলাদা জায়গা করে দেওয়া যায়! আদিখ্যেতার একটা সীমা থাকা উচিত!
এমন মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তার পরও একবার অনুরোধ করি, শুধুই সমালোচনার চশমাটা চোখ থেকে খুলে ম্যাচটাকে একটু অন্যভাবে দেখুন। তুলনায় আনুন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিমত্তার পার্থক্য, দুই দেশের ফুটবলারদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দুই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান। তাহলেই বুঝবেন, চার গোল খেলেও এই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। সবকিছু বাদ দিন। এই মুহূর্তে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন, চারবার বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ যেভাবে সমানতালে লড়াই করল, একের পর এক আক্রমণে উঠল, সেটার প্রশংসাটা তো অবশ্যই প্রাপ্য বাংলাদেশের ফুটবলারদের।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও এমনই মনে করেন। একটি আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে খেলতে এই ম্যাচের পরদিনই চীন-যাত্রা বাংলাদেশ দলের। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় মামুনুলের কণ্ঠে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ নিয়ে এক ধরনের তৃপ্তিবোধই খুঁজে পাওয়া গেল, ‘আমি বলছি না, আমরা বিরাট কিছু করেছি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে আমরা প্রায় সমানতালে খেলেছি। এটা যথেষ্টই তৃপ্তিদায়ক।
স্কোরলাইনের দিকে তাকালে মনটা একটু খারাপ হয়। আরও সতর্ক হলে হারের ব্যবধানটা কমানো যেত। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যে খেলাটা খেলেছি, সেটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই ম্যাচ আমাদের জন্য অনেক কিছু পাওয়ারও।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাঠের এই ম্যাচে মামুনুলদের প্রমাণ করার ছিল অনেক কিছুই। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুশানবের ম্যাচটির ‘দুঃস্বপ্ন’ ভোলার জন্য একটু উজ্জীবিত পারফরম্যান্সের অপেক্ষায় ছিল গোটা দলই। মামুনুলের বিশ্বাস, বাংলাদেশ দল কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক দর্শকের সামনে সে ধরনের পারফরম্যান্সই দেখিয়েছে।
টিম কাহিল, মাইল জেডিনাক, অ্যারন মুইদের মতো বিশ্বমানের ফুটবলারদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাকে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা হিসেবেই মনে করেন মামুনুল। তাঁর মতে, ‘কাহিল, জেডিনাক, মুইরা যে কী ধরনের খেলোয়াড়, সেটা তাঁদের সঙ্গে মাঠে না নামলে বুঝতে পারতাম না। এরা প্রতিপক্ষকে খুব ভালো পড়ে ফেলতে জানে। আমরা যে গোলগুলো খেয়েছি, সেগুলোর কথাই ধরুন। রক্ষণভাগের ক্ষণিকের ভুল ওরা কাজে লাগিয়েছে। খুব অল্প জায়গাতেই ওরা খেলতে পারে। পার্থ আর ঢাকার দুটি ম্যাচে দারুণ অভিজ্ঞতা হলো।’
মামুনুলের মতে, বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতি করতে হলে এই মুহূর্তে রেজাল্টের কথা ভুলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি করে ম্যাচ খেলতে হবে। বাংলাদেশ হয়তো এসব ম্যাচে বড় ব্যবধানেই হারব। কিন্তু খেলোয়াড়েরা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন, তা বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেক দূর। কীভাবে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মামুনুল, ‘পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটায় আমরা ভয়ে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে ছিলাম। ওই ম্যাচে একেবারেই নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে পারিনি। কিন্তু ঢাকায় দেখুন, আমরা কিন্তু ভালোই পাস খেলেছি। বল নিয়ে এগিয়েছি। অস্ট্রেলীয় ফুটবলারদের পা থেকে বল কেড়েও নিয়েছি বেশ কয়েকবার।
দ্বিতীয়ার্ধে তো আমরা সমানতালেই খেললাম। আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আবার খেললে আমরা আরও ভালো করব। এমন দলের সঙ্গে ছয়-সাতটি টানা ম্যাচ খেললে একটা-দুইটা ম্যাচে ড্র করে ফেলাও অসম্ভব না। সামনের দিনগুলোতে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা।