খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৫ : রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ‘স্থবির’ অবস্থার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন।
বুধবার টেলিটকের গুলশান কার্যালয়ে অপারেটরটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “টেলিটকের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি করার অভিযোগ রয়েছে। টেলিটকের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার দুর্নীতি হচ্ছে কি না তা তদন্ত করতে এবং প্রতিষ্ঠানটি স্থবির হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।”
তিন থেকে চারদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনের পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই তদন্ত কমিটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টেলিটককে একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান করতেই এ তদন্ত করা হবে।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বা টেলিটকের কোনো কর্মকর্তা এই তদন্ত কমিটিতে থাকবে না জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, “এই কমিটিতে শিক্ষক, গবেষক এবং টেকনিক্যালদের রাখা হবে। এমন কোনো ব্যক্তি থাকবে না যাতে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়।
“টেলিটকের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করছি না, টেলিটক আমাদের মোবাইল ফোন, আমি চাচ্ছি টেলিটক সকল মোবাইল অপারেটরদের সাথে প্রতিযোগিতায় আসুক, সমকক্ষ একটি পর্যায়ে আসতে পারে।”
বাজারে টেলিটকের সিমের অপ্রতুলতা, কাস্টমার কেয়ারে সেবার মানোন্নয়ন এবং নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “টেলিটক যে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়েছে তা অন্যান্য অপারেটরদের তুলনায় দশ ভাগের একভাগ, সেই বিনিয়োগ নিয়ে টেলিটক সব জায়গায় টাওয়ার করবে-এটা বড় ধরনের স্বপ্ন দেখা হয়ে যাবে। টেলিটকের জন্য সফট লোন চাই, প্রকল্প আকারে চাই না। কারণ তাতে বিলম্ব হয়।
“টেলিটকের ইনভেস্টমেন্ট জোগাড় করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার প্রায়োরিটি টেলিটক নিজের পায়ে দাঁড়াক। টেলিটকের টাওয়ার স্থাপন হলে নেটওয়ার্ক সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হবে।”
নম্বর ঠিক রেখে অন্য অপারেটরে যাওয়া বা এমএনপি চালু হলেও সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
ছোট ছোট সমস্যা যেমন কাস্টমার কেয়ারের সেবার মান, বাজারে সিম না পাওয়া, ব্যালেন্স রিচার্জে কার্ড না পাওয়া- এসব ক্ষেত্রে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতে কর্মরতদের পরিবর্তন করে নতুন লোকবল নিয়োগ দেওয়ারও পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
বর্তমানে টেলিটকের দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে এবং এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে আগামী ২০১৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কের উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যবসা করতে হলে সেবার মান উন্নত করতে হবে মন্তব্য করে তারানা হালিম কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “টেলিটককে স্পিডআপ করার জন্য দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি টিম করেন। ফাইল কোথায় আটকে থাকে তারা তা দেখবে এবং কেন হয়নি তা দেখবে।”
আগামী দুই/এক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে টেলিটকের থ্রিজি সেবা নিয়ে যেতে একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “টেলিটককে রি-ব্যান্ডিং করতে বেশি সময় প্রয়োজন হবে না, দুই মাসের মধ্যে রি-ব্র্যান্ডিং করতে হবে।
“টেলিটক অবহেলিত ছিল। তিন বছর আগে থ্রিজি চালুর সময় যে গতি ছিল তা এখন স্থবির হয়ে রয়েছে। এর গতি ফিরিয়ে আনতে হবে।”
এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।