Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

84খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫ : পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শৈশব থেকেই সংসার সম্পর্কে মেয়েদের নানা রকম শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। কীভাবে শ্বশুর-শাশুরির সাথে ভালো ব্যবহার করা যায়, কীভাবে স্বামীর মন জয় করা যায় এমন অনেক পরামর্শই দিয়ে থাকে পরিবারের লোকজন। বিশেষত, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি থাকলে তারা মেয়েদের অনেক গোপন বিষয়েও পরমর্শ দেন। কিন্তু এই পরামর্শই যে তাদের কন্যাটির ভাগ্যে কাল হয়ে নেমে আসতে পারে তা তারা একবারও ভাবেন না।
পুরুষ হোক বা মহিলা বিয়ে প্রত্যেকর কাছেই একটা নতুন অভিজ্ঞতা, দারুণ অনুভূতি, জীবনের নতুন অধ্যায় পা রাখা। সম্পর্ক মজবুত করতে অনেক সময়ই বড়দের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হয়। তা তো বটেই, তাদের অভিজ্ঞতার দাম তো রয়েছেই।
এই প্রতিবেদন সেই বলিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্যই যারা নিজেদের আপনজনের জীবন সুখস্বাচ্ছন্দ্যময় দেখতে চান। আর তাই আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ বিয়ের আগে ছেলেমেয়েকে এই উপদেশগুলি দয়া করে দেবেন না। যুগ বদলেছে, সময় বদলেছে, মানুষের চিন্তাধারা বদলেছে। তাই পুরনো ধ্যানধারণা ছেড়ে এগিয়ে চলুন। যেসব উপদেশ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ব্রেকিংনিউজ পাঠকদের জন্য তা নিচে তুলে ধরা হলো।
পুরুষরাই সংসারের উপার্জনের আধার:
পরিবারের বয়ঃজেষ্ঠ্যদের মতে পরিবারে একমাত্র পুরুষরাই উপার্জন করার যোগ্য। পুরুষেরই দায়িত্ব পরিবারের সকলের ব্যয়ভার বহন করা, পরিবারের ছাদ হয়ে সবাইকে রক্ষা করা। কিন্তু সত্যিই কি আজ পরিবারের দায়িত্ব শুধু পুরুষের? মহিলারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, উপার্জন করছে, পুরুষদের চেয়ে অনেকাংশে সফলও হচ্ছে।
৩০ বছর হওয়ার আগে বিয়ে করা উচিত:
বড়রা বলেন, পুরুষদের ৩০ বছরের আগে বিয়ে করে নেওয়া উচিত। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই বয়সের সীমা আরও কম। মনে করা হয় বয়স বেড়ে গেলে ভাল পাত্রী মিলবে না, তাছাড়া ভবিষ্যতে সন্তান আনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। কিন্তু এইভাবে কোনও বয়সের মধ্যে বিয়ের টার্গেট বেঁধে দেয়া উচিত নয়। হুড়োহুড়িতে করা কোনও সম্পর্ক বেশিদিন টিকতে না পারার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মহিলাদের ৩০ বছরের আগে মা হওয়া উচিত:
মহিলাদের ক্ষেত্রে ২৭-২৮ বছরের আগে মা হতেই হবে এই উপদেশ পরিবারের বড়রা অনেক সময়ই দেন। কারণ তাদের কথায় বয়স বেড়ে গেলে সন্তান প্রসবে সমস্যা হবে। কিন্তু আজকাল বেশিরভাগ মেয়েদেরই পরিবার ও অফিস দুই সামলাতে হয়। সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চয় না করে শুধুমাত্র তাড়াতাডি মা হয়েই কি দায়িত্ব পালন করা যায়?
বিয়ের পর স্বামীর ঘরই মেয়েদের আসল ঘর:
বিয়ের ক্ষেত্রও আজও মেয়েদের এই শিক্ষাই দেন অনেক মা-বাবা। তারা বিবাহ বিচ্ছেদ ভাল চোখে দেখেন না। তাদের কথায় স্বামীর যেহেতু তা স্ত্রীর উপর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে, তাই স্বামী যাই করুক না কেন মেয়েদের তা মেনে নেওয়া উচিত, মারধর হোক বা অপমান, জোর করে যৌনমিলন হোক বা মানসিক অত্যাচার মেয়েদের সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়া উচিত। মেয়ের প্রাণ ও সম্মান আগে নাকি সমাজের কাছে নিজেদের মান আগে একবার ভেবে দেখুন তো।
মহিলাদের বেশি রাগ ভাল না:
যে কোনও উপায়েই মেয়েদের স্বামীর পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলা উচিত। তাদের কোনও কিছু খারাপ লাগার অধিকার নেই। তাদের আত্মসম্মানবোধ থাকতে নেই। বাকিদের আনন্দেই মেয়েদের আনন্দ হওয়া উচিত। এমনকি তার সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনও অধিকারও নেই। কিন্তু মেয়েরাও তো মানুষ। তাদের অনুভূতি, আত্মসম্মানবোধ থাকবে না কেন বলতে পারেন? তারা তো পুরুষদের থেকে কোনও অংশে কম নয়?
মহিলা মানেই রান্নাঘর সামলাতে হবে:
বাড়ির বউ রান্না করতে জানে না এমনটি শুনলে তো বড়দের চোখ কপালে ওঠে, আর পুরুষরা রান্না জানে তার মানেই পৌরষত্ব নেই। যেখানে পরিবারকে সামলাতে মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাইরে গিয়ে কাজ করছে উপার্জন করছে, সেখানে বাড়ির ছেলেরাই বা মহিলাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বাড়ির কাজ করতে পারবে না কেন?
অতএব নারী-পুরুষ ভেদাভেদ দূর করে আপনার মেয়ের দাম্পত্য জীবনকে আরো বেশি সুখময় করে তুলতে তাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিন। মেয়েটি আপনার। তাই তাকে স্বনির্ভর করে তোলার দায়িত্বও নিশ্চয়ই আপনারই।