Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

46খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ ‘অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে’ অর্থনৈতিকভাবে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে মন্তব্য করে ‘দেশের স্বার্থে’ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের কাজে আরও যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, শিল্পকারখানা ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সবসময়ই সজাগ থাকবে এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
রোববার নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাব, বিনিয়োগকারী ও দেশের স্বার্থে নিজেদের কর্মকাণ্ড অধিকতর যতেœর সাথে পরিচালনা করুন। সরকারের সহযোগিতা আপনাদের জন্য অব্যাহত থাকবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবি আই) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
অনুষ্ঠানে দুই কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও ছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এবং দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
“টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিনিয়োগ। একটি বলিষ্ঠ, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর পুঁজিবাজার শিল্প-কারখানা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি আশা করি- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ বিষয়ে সবসময়ই সজাগ থাকবে এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
এসময় তিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ছয় দশমিক দুই শতাংশ থাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাতগুণ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা বর্তমানে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি।”
অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “শিল্প ও অবকাঠামোসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির গতিধারা ত্বরান্বিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের অন্যতম উৎস পুঁজিবাজার। তাই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।”
তার সরকারের সময় পুঁজিবাজারের জন্য বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথাও এসময় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আইনি পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে শক্তিশালী করা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন, পুঁজিবাজারের ডিমিউচুয়ালাইজেশন, পুঁজিবাজারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল চালু করা, আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য ফাইনানশিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণয়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি রুলস’ প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সঠিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন’ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আরও উন্নত স্তরে নিতে শিগগিরই কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজার সংক্রান্ত নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু করা, ডিজিটালাইজড ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘ফাইনানশিয়াল লিটারেসি’ প্রোগ্রাম চালু করা।
অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন ও এসইবি আই চেয়ারম্যান ইউকে সিনহা একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন; যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, আজকের এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া’র অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারকে আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
“বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি অর্থাৎ সর্বস্তরে ফাইনানশিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করছি। এজন্য প্রয়োজনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া’র সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।