খোলা বাজার২৪ ॥শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৫: গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে এ আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া বন্ধ মিডিয়া হাউজগুলো অবিলম্বে খুলে দেয়া এবং সরকারের সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশের কারণে যেসব প্রকাশক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
হয় ৫৮৬ ভোটে। বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। অনুপস্থিত ছিলেন ২৫ জন।
আলোচনায় বক্তারা গণতন্ত্র ও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জিন ল্যাম্বার্ট, ইকনাজিও কোরাও, চার্লস ট্যানক, ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেদা, ডিটা চারানজোভা, পিয়ের অ্যান্টোনিও প্যানজেরি, লোলা সাঞ্চেজ ক্যালডেন্টি, শন কেলি, রিচার্ড হোয়িট, ক্যারোল কারস্কি, বৃট্রিজ বেকেরা বাস্তেরেকিয়া, লিন বয়লাম, ডায়ান জেমস, ল্যামপ্রোস ফাউন্টুলিস, নিনা গিল, মনিকা ম্যাকোভেই, জিরি পসপিসিল, নোটিস মারিয়াস, আইভান জ্যাকাভিচ, স্ট্যানিসলাভ পোলক্যাক ও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
শুনানিতে বক্তারা বলেন, ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইস্যু উত্থাপন অব্যাহত রাখবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন জোরদার করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তায় ইইউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাবের অন্যতম লেখক জিন ল্যাম্বার্ট বলেন, আমরা প্রত্যাশা করবো যারা বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তাদের রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। আর একই সুবিধা দেবে রাজনৈতিক বিরোধীদেরও। কেননা, তারাও বিভিন্নভাবে হামলার সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে।
নিনা গিল বলেন, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর অভিযান, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিরোধীদের ওপর হামলা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাগুলো দমন-পীড়নের স্পষ্ট সংকেত। উদ্বেগের বিষয় হলো সহিংসতা আসছে দুই দিক থেকে- কট্টরপন্থী সংগঠন এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার বার্তা হলো, উগ্রপন্থী সহিংসতা থেকে একটি সমাজকে রক্ষা করার জন্য সকলের অংশগ্রহণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার থেকে উত্তম কোনো অস্ত্র নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে আমি এ বার্তায় সত্যিকার অর্থে কর্ণপাত করার আহ্বান জানাই। আমি জানি, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে মানবাধিকার রক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আর আমি এ কমিশনের উচ্চ প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানাই, এসব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য। একই সঙ্গে দেশটিতে সব গণতান্ত্রিক দল এবং সুশীলসমাজের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন।
রিটা চারানজোভা বলেন, বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক সব দেশে মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এতে এও বলা আছে যে, শুধু যৌক্তিক কারণে স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।
রিচার্ড হোয়িট বলেন, সমালোচনাকে সরকার ক্রিমিনালাইজ করেছে। আইসিটির ৫৭ ধারায় ধর্ম নিয়ে সমালোচনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক রিপোর্টিং ক্রিমিনাইজ করা হয়েছে।
লিন বয়লান বলেন, এ বছর ৫ জন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এমন ভীতি প্রদর্শন ও ভবিষ্যৎ সহিংসতার হুমকি দ্রুতই বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অনেক লেখক এমন হুমকিতে হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, না হয় আত্মগোপনে আছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সমপ্রতি বেশ কিছু হত্যা ও সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে ব্লগার, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের ওপর। এগুলো পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাস। এগুলো তীব্র নিন্দাযোগ্য।
পার্লামেন্টের আরেক সদস্য বলেন, বাংলাদেশে দায়েশ বা আইসিসের হুমকি রয়েছে। সরকারের উচিত সব সাংবাদিককে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আরেক বক্তা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ। তবে দেশটি অবশ্যই মানবাধিকারের উদাহরণ নয়। এ বছর সেখানে ৫ জন ব্লগার, সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
অপর এক বক্তা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হলো গণতন্ত্রের অংশ। এর ওপর ইসলামপন্থীরাই শুধু আক্রমণ করছে তা নয়। একই সঙ্গে সরকারও একই কাজ করছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিটি আলোচনায় তুলে ধরতে হবে।
আরেক এমপি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।
অপর এক বক্তা বলেন, গুম হয়ে যাওয়া বিরোধী দলের সদস্যদের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন। আমরা এসব গুমের ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।