খোলা বাজার২৪॥ শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫: পৌরসভা নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়ণের পর তফসিল হয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ই জানতে পারেন, মেয়র পদে কোনো দলের মাত্র একজনই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।
সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি শুনে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেই ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিবকে এবং নির্বাচন সহায়তা শাখায় টেলিফোন করে নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির সংশোধিত কপি নিয়ে আসেন।
ইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিধি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর ও গেজেট জারির পূর্বে দেখতে পারেননি এ নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনী কাজে কক্সবাজার সফরে থাকায় তার অনুপস্থিতিতে অনেক সংশোধনী এসেছে। এ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষও দেখিয়েছেন তিনি।”
দলীয় প্রতীকে প্রথম পৌরসভা নির্বাচনের আইন সংশোধনের কয়েক দিনের মধ্যে আবার সংশোধন, বিধিমালায় বারবার সংশোধনের মধ্য দিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়োর প্রকাশই ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণার সময় এই তাড়াহুড়োর স্বীকারোক্তিও এসেছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে।
“এ আইন যে হচ্ছে আমরা তা জানতাম না; খবরের কাগজ পড়ে জানলাম। আইন পাস হওয়ার পর কী রয়েছে, তা দেখলাম। আমাদের তো অনেক কাজ। তাড়াহুড়া করে কাজ করেছি।”
স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করতে সংশ্লিষ্ট সবগুলো আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পৌরসভা নির্বাচনের আগে যথেষ্ট সময় নেই বলে তা অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা হয়।
মেয়র ও কাউন্সিলররা দলীয় প্রতীকে ভোট করবেন, এটাই ছিল অধ্যাদেশে। সে অনুযায়ী বিধিমালা তৈরিও হয়। ইতোমধ্যে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে অধ্যাদেশটি সেখানে অনুমোদিতও হয়।
কিন্তু তারপর আবার তা সংশোধনের চিন্তা আসে সরকারের। কাউন্সিলরদের বাদ দিয়ে শুধু মেয়র নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার বিধান রেখে আইনে ফের সংশোধন আনার পর তফসিল ঘোষণা করে ইসি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে ঘোষিত এই তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর।
তারপর থেকে বিধিমালা এবং এখন তফসিল নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সরকারি ও বিরোধী উভয় দল থেকে নানা বিষয়ে আপত্তি এসেছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অন্তত সংসদ সদস্যদের প্রচারে যেতে দেওয়ার সুযোগ চাইছে। সরকারি সুবিধা বাদ দিয়ে তারা প্রার্থীর পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচারে যেতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকে স্থানীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। দলীয় মনোনয়নসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। প্রার্থীর পক্ষে প্রচার ও কার্যক্রমে তাদের বাইরে রেখে আচরণবিধি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।”
আগামী রোববার আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে চিঠি দেবেন বলে জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রিয়াজুল করিম কাওসার।
আওয়ামী লীগের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ভোট পেছানোরও দাবি জানানোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে বিধি করায় তা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে।
ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি বলছে তফসিল পুনর্র্নিধারণ করতে। একজন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দেওয়ার বিধান করায় ভোট থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কাও করছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান এমপি-মন্ত্রীদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, তাহলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকবে না।
শুক্রবার বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোসহ কয়েকটি শর্তারোপ করে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।
সিইসি কাজী রকিব বলেন, হাতে সময় কম থাকায় নতুন আচরণবিধি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেননি তারা।
রাজনৈতিক দলগুলোর নানা দাবি উঠলেও নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর নতুন করে বিধিতে সংশোধনী আনার সুযোগ নেই। ভোটের তারিখ পেছানোও এ মুহূর্তে সম্ভব না।