খোলা বাজার২৪॥ রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫ : সৌদি আরবের রিয়াদে ‘বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের’ দায়ে শ্রীলঙ্কার এক গৃহকর্মীকে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে একই অপরাধে তার পুরুষ সঙ্গীকে দেওয়া হয়েছে ১০০ দোররার সাজা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই বিবাহিত নারী বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেন। এরপর অগাস্টে সৌদি আরবের একটি আদালত ওই রায় দেয়।
তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সাল থেকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে কাজ করছিলেন ওই নারী। তার সঙ্গীও শ্রীলঙ্কার একজন অভিবাসী শ্রমিক।
তিনি অবিবাহিত- এই যুক্তিতে তাকে তুলনামূলক কম শাস্তি, ১০০ দোররা মারার আদেশ হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর মুখপাত্র উপল দেশাপ্রিয়া রয়টার্সকে বলেন, “রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পাশাপাশি ব্যুরোর পক্ষ থেকে ওই নারীর জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চালানো হচ্ছে ।”
ওই নারী ক্ষমা পাবেন কি না- সে বিষয়ে কলম্বোয় সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদেনে জানানো হয়।
‘শরিয়া’ বা ইসলামী আইন অনুসরণকারী দেশ সৌদি আরবে ‘ব্যভিচার’ ও মাদক পাচারের মতো অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড। দেশটির এ ধরনের সাজা ও বিচার পদ্ধতি নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই সোচ্চার।
সৌদি এক শিশুকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার এক গৃহকর্মীর শিরোñেদ করা হয়। সে সময়ও আপিল করেছিল কলম্বো।
কয়েক লাখ শ্রীলঙ্কান নারী-পুরুষ তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে বা গাড়ি চালানোর মতো কাজে রয়েছেন।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৯৫২ জন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এই প্রবাসীরা গতবছর ৭০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল প্যানেলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সৌদি আরবে এ বছর দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অ্যামনেস্টি বলছে, আরবি না জানায় ও আদালতে অনুবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় বিদেশিরা, বিশেষ করে দরিদ্র দেশ থেকে আসা অস্থায়ী শ্রমিকরা ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
অবশ্য রিয়াদের দাবি, তারা সব আসামিকেই সমান সুযোগ দেয়।