খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ মামলার দশম দিনের শুনানি চলছে।
সোমবার সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তার সঙ্গে আছেন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজউদ্দিন ফকির।
অন্যদিকে নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে আছেন এস এম শাজাহান।
এর আগে গত বুধবার নিজামীর আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন শুনানির জন্য দাঁড়ালেও যুক্তি উপস্থাপন শুরুর আগেই শূনানি মুলতবি হয়ে যায়।
সেদিনের শুনানিতে নিজামীর আইনজীবী এই জামায়াত নেতার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেল পরে দাবি করলেও আসামিপক্ষের উকিল তা অস্বীকার করেন।
শুনানির পর মাহবুবে আলম সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, “উনারা যা সাবমিশন করেছেন, আমি যা বুঝেছি, তাতে আমার মনে হল, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাদের শীর্ষ আইনজীবীরা এই প্রথম তাদের অভিযুক্ত একজন নেতা যে অপরাধী, তা তারা স্বীকার করে নিলেন এবং স্বীকার করে নিয়ে শুধু মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন।”
অন্যদিকে অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা ষষ্ঠ মামলা এটি, যার ওপর শুনানি চলছে।
বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।
স্বাধীনতাকামী বাঙলির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে আসে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।