খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫: জ অন্য দেশ থেকে ঋণ হিসেবে নগদ অর্থের পরিবর্তে পণ্য বা ‘সরবরাহ ঋণ’ নেওয়ার সুযোগ সীমিত করে খসড়া বৈদেশিক ঋণ নীতিমালা তৈরি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
তবে ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন’ হলে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতি’ সাপেক্ষে এ ধরনের ঋণ নেওয়ার সুযোগ রাখা হবে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, আগে গণখাতে ক্রয় আইন (পিপিএ) ও গণখাতে ক্রয় নীতিমালার (পিপিআর) কয়েকটি ধারা অনুসরণ করে বিদেশি ঋণ নীতি পরিচালিত হতো। এবারই প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হচ্ছে।
সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘সরবাহ ঋণ’ নেওয়া হয়। বাংলাদেশে বি আরটিসির জন্য বাস ও রেলওয়ের জন্য কোচ, লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন আমদানি হয়েছে এ ধরনের ঋণেই।
এ ঋণের ক্ষেত্রে দরপ্রস্তাবের সুযোগ থাকে না বলে ঋণদাতা দেশ সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবার দাম বেশি রাখার সুযোগ পায়। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের পণ্যও সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৮ অগাস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির মতো বিশেষ ক্ষেত্র’ ছাড়া সাধারণভাবে সরবরাহ ঋণ পরিহার করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিদেশি ঋণ নীতির খসড়ায় ‘এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে’ বলে জানান সচিব।
“তবে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে ঋণ নিতে হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।”
মেজবাহউদ্দিন জানান, সরবরাহ ঋণে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে কঠোর মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে।
প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানের ‘ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা’ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বার্ষিক শতকরা লাভের (ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন) হার ১৫ শতাংশের বেশি কি না তা যাচাই করে দেখা হবে।
সরবরাহ ঋণের ক্ষেত্রে ‘অনমনীয় ঋণের বার্ষিক সীমা’ বেঁধে দেওয়ার কথাও খসড়ায় বলা হয়েছে।
সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বৈদেশিক ঋণের মোট পরিমাণ ও পরিশোধের অবস্থা এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইআরডি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ সীমা নির্ধারণ করবে।
মাথাপিছু আয় বিবেচনায় ‘নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে’ উন্নীত হওয়ার ফলে দাতাসংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমে আসায় সরকারকে বিদ্যমান হারের চেয়ে কিছুটা বেশি সুদে ঋণ নেওয়া লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিবেচনায় সরকার ‘অনমনীয় ঋণ’ এর নীতিমালা পরিবর্তন করে সরবরাহ ঋণে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন জানান।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ০.৭৫ শতাংশ, জাইকার কাছ থেকে ০.০১ শতাংশ এবং এডিবির কাছ থেকে ১-২ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়।
নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় সুদের এ হার বেড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে ইআরডি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি কয়েকটি দাতা সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণে সুদের হার বাড়াতে চেয়েছে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মেজবাহউদ্দিন জানান, খসড়া অনুযায়ী অনুমোদিত প্রকল্পের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পিপিএ-২০০৬ ও পিপিআর -২০০৮ অনুসরণ করে দরপত্র আহ্বান করবে।
এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দরপত্রের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করবে।
কমিটির অনুমোদন পেলে ঋণগ্রহণকারী ‘সংস্থা’ সরবরাহকারী বা ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পরে ঋণ চুক্তির প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠাবে।
ঋণ নিতে হলে প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানকে তার মূলধন কাঠামো, সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী পুঞ্জিভূত লাভ কিংবা লোকসানের পরিমাণ এবং আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
‘সরবরাহ ঋণ, বায়ার্স ক্রেডিট/বিডার্স ফাইন্যান্স এবং অনুরূপ অর্থায়নের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্রয় প্রক্রিয়া’য় এ পদ্ধতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক হবে বলে মেজবাহউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।