খোলা বাজার২৪,বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫: যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গতকাল মঙ্গলবার নয়জন প্রার্থী বছরের শেষ দলীয় বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। বিতর্কে এক ঘণ্টা তাঁরা জঙ্গি সংগঠন আইএসের নিয়ে কথা বলেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আইএসকে পরাজিত করতে নিজেদের ধারণার কথা তুলে ধরেন বিতর্কে।
এ ছাড়া অভিবাসন, আইএস দমনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ব্যর্থতার কথাও বিতর্কে উঠে আসে। গতকাল মঙ্গলবার সিএনএন প্রচারিত রিপাবলিকান পার্টির এ বিতর্কটি লাস ভেগাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রার্থীরা উত্তপ্ত বক্তব্য ও বিতর্কে একে অপরকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা চালান। আলোচিত দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জেব বুশ মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছেন। বিতর্কে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্ব ঘোষণা আবারও ব্যক্ত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জেব বুশ বলেন, এ ধারণা সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় হতে পারে না। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ধারণাকে অলীক এবং ‘পাগলামি’ চিন্তা বলে মন্তব্য করেন। বিতর্কে বেশ কয়েকবারই জেব বুশ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বিতর্কের শুরু থেকেই জেব বুশ তাঁকে লক্ষ্য করে বক্তব্য রাখছেন। জবাবে জেব বুশ বলেন, এতে ধরাশায়ী হলে তো চলবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে হলে আরও শক্ত বক্তব্য মোকাবিলা করার হিম্মত থাকতে হবে। জেব বুশের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, জেব, তুমি শক্ত মানুষ ঠিকই, তবে জনমত জরিপে আমি যখন ৪২ শতাংশ, তোমার অবস্থান মাত্র তিন শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বছরের শেষ দলীয় বিতর্কে অংশ নিয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী নয় প্রার্থী। বিতর্কের শেষে কার্লি ফিয়োরনা, টেড ক্রুজ, জেব বুশ ও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। গতকাল মঙ্গলবার সিএনএন প্রচারিত রিপাবলিকান পার্টির এ বিতর্কটি লাস ভেগাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ছবি: এএফপি
টেলিফোনে নজরদারির ওপর প্রণীত আইন অপর দুই প্রার্থী সিনেটর মার্কো রুবিও এবং টেড ক্রুজ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আইনে নাগরিকদের ওপর নজরদারির জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর নানা পূর্বশর্ত আরোপের কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রণীত আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন টেড ক্রুজ। ব্যাপকভাবে সমালোচিত ওই আইনের বিপক্ষে কংগ্রেসে ভোট দিয়েছিলেন মার্কো রুবিও। তিনি অভিযোগ করেন, যে মুহূর্তে গোপন তথ্য সরকারের বেশি করে জানা প্রয়োজন, সে সময় সিনেটর ক্রুজ প্রেসিডেন্ট ওবামার ব্যর্থ আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। পাল্টা জবাবে ক্রুজ বলেন, এ আইনের ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের হাতে জননিরাপত্তার জন্য অধিকতর সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিষয় তেমন প্রাধান্য পায়নি। প্রার্থীরা অভিবাসনের নামে অবৈধ ব্যক্তিদের কীভাবে ঠেকানো যায়, মেক্সিকো সীমান্তে কীভাবে বেষ্টনী দেওয়া যায়—এসব বিষয় নিয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সবাই একযোগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। আইএস দমনে এবং সিরিয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন সব পরিকল্পনার কথা তাঁরা তুলে ধরেন। কেউ কেউ কার্পেট বম্বিং করে আইএস দমনের কথা বলেন। মার্কিন নিত্যদিনের সমস্যার বদলে তাঁরা দেশের নিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদ দমনে কে কতটা শক্ত অবস্থানে যাবেন, বিতর্কে তা-ই তুলে ধরেন। ডেমোক্র্যাটের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নাম বারাক ওবামার ব্যর্থ নীতির সঙ্গে উচ্চারিত হলেও তাঁদের নজর ছিল পরস্পরকে ধরাশায়ী করার দিকেই।
বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাজনৈতিক বিতর্কে অভিজ্ঞ না হলেও দলীয় বিতর্কে তিনি ভালো করেছেন বলেই মনে করছেন। জেব বুশ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো হঠকারিতার দেশ নয়। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এ দেশের সুনাম রয়েছে এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বিতর্কের পর তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সময় নিয়ে রাজনীতি আত্মস্থ করতে হবে। দলীয় বিতর্কে ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ ভালো করেছেন বলে জনগণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানা গেছে।