Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পিঠ বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার এদেশে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সৈন্যদের বিচারের প্রতিশ্র“তি দিলেও পরে তা রাখেনি বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, “তারা এখানে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছিল। পরাজয় স্বীকার করেছে। পরাজয় বরণের পর নানা দেন দরবার করেছে কোনোমতে রক্ষা পেতে। অনবরত মিথ্যা কথা বলেছে। সেইভাবে রক্ষা পেয়েছে।

“সেখানে অনেকগুলো শর্ত ছিল। প্রধান শর্তটি ছিল-তোমরা তোমাদের দেশে এই সব হত্যাকারী বদমাশদের বিচার করবে। ভুট্টো সেই প্রতিশ্র“তি কোনো দিন রক্ষা করেনি। তারও দুর্ভাগ্য- নিজেও একটি চক্রান্তের ফলে নিহত হয়।”

অবিভক্ত পাকিস্তানে ১৯৭০ এর নির্বাচনে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (৮৮ আসন) পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ (১৬৭ আসন) পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

কিন্তু ছল-চাতুরিতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা না দিয়ে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তানি হানাদাররা। নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা ছাড়েন ভুট্টোর হাতে।

জুলফিকার আলী ভুট্টো জুলফিকার আলী ভুট্টো এরপর ভুট্টোই বাংলাদেশি বন্দি পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের ফিরিয়ে নেওয়াসহ সব ধরনের দেন-দরবার করেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহিত বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধে পারদর্শী একটা দস্যুগোষ্ঠী।

তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসটি আমাদের বিজয়ের মাস। আমরা উৎসব করি, আনন্দ করি। অবশ্যই এটাও মনে রাখি, এই মাসে জঘন্য কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা এই জন্যই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ (বুদ্ধিজীবী) দিবস পালন করি, আবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উৎসব পালন করি।

“৯ মাস (পাকিস্তানিরা) হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। তাদের আমরা ৯ মাসে এই দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। এই দস্যুগোষ্ঠী, না একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী ছিল, এরা বাস্তবেই একটা দস্যুগোষ্ঠী ছিল। মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে তারা বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছে।

“তারা হত্যা করেছে সেই সব মানুষকে যাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তারা হত্যা করেছে সেই সব মানুষদের, যারা তাদের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তারা হত্যা করেছে সেই সব মানুষদের, যারা যে কোনো সময় সবচেয়ে বেশি টার্গেট হয়, সেই সংখ্যালঘুদের।”

“আমরা তাদের বিদায় করেছি, অত্যন্ত ঘৃণিত উপায়ে তারা বিদায় হয়েছে।”

যুদ্ধের আগে বাংলাদেশের মানুষ তেমন একটা অস্ত্র চালাতে জানত না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “একেবারে এমন একটি দেশে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, যেখানে মানুষজন যুদ্ধে আগ্রহী ছিল না। ‘৭২ সালে একটা হিসাব করেছি, সেই দিন (২৫ মার্চ) দেশের মানুষের হাতে ২৫ হাজার বন্দুক ছিল লাইসেন্স ওয়ালা। আর পুলিশের হাতে কিছু ছিল।

“এর বাইরে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের কাছে কিছু অস্ত্র ছিল।”

মুহিত বলেন, “তাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে আমরা অস্ত্র ধরতে শিখি। আমাদের ১৫ থেকে ৬০ বছরের মানুষ অস্ত্র ধরতে শেখে এবং যুদ্ধ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম ছাড়া আর কোনো দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়নি।”

‘কিসিঞ্জারের অবদান বুদ্ধিজীবী হত্যা’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের কঠোর সমালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

ভারত ও রাশিয়ার সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু জনাব কিসিঞ্জার, তিনি কোনোমতেই বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে দিবেন না। কেন? সেটা হয়তো কোনোদিন ব্যাখ্যা দিবেন।

“এখন যেসব ব্যাখ্যা দেন, সবগুলো মিথ্যা। সেগুলো কেবল নিজেকে রক্ষা করতে যা প্রয়োজন তার যুক্তি দেন। তখন আমাদের যাতে ধ্বংস হয় তার সব ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এখানে পাকিস্তানের সেনাপতি নিয়াজী দেখল যুদ্ধ করার পরিস্থিতি নাই। ১১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের ইচ্ছা জানিয়ে জাতিসংঘে পাঠায়।

“মদ্যপায়ী জীব ইয়াহিয়া অমত করায় সেটা আর হল না। এর ফলটা আমি অন্যভাবে দেখি। সেই সময়টা পাকিস্তানিদের ১৪ তারিখের হত্যাকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের সেখানে শুধু সহযোগিতা করে না, বুদ্ধিটা দেয় বেজন্মা জামায়াত।

“তাদের বুদ্ধিতে আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে নিয়ে যায়, নৃশংসভাবে হত্যা করে। অনেকেই আমার অনেক ঘনিষ্ঠবন্ধু ছিল, গিয়াসউদ্দিন তাদের একজন।”

“যাই হোক, কিসিঞ্জারের অবদান হচ্ছে, ১৪ তারিখের বুদ্ধিজীবী হত্যা। কিন্তু তাতেও পাকিস্তান দাঁড়াতে পারল না।”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, হবে, চলতে থাকবে। আমি আশা করি হয়তো ২০১৮ সালের দিকে এই সব শেষ হবে।”

সময়মতো পদ্মাসেতু নিয়ে সন্দেহ নেই অর্থমন্ত্রীর

মুহিত বলেন, “পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটা ঝগড়া হয়। তারা বলে আমরা দুর্নীতি করেছি। আমরা বলি, দুর্নীতির সুযোগই হয়নি। কারণ কাজই শুরু হয়নি। হয়তো দুর্নীতির পরিকল্পনা করেছিল।”

এক পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংক তাদের অভিযোগ থেকে সরে আসে বলে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন,

“অবশেষে তারা রাজি হলো, যা বাতিল করেছিল সেটা রিস্টোর করল।

“কিন্তু বলল, এতো দিন হয়ে গেছে, সেই সময় কস্ট ছিল ২ পয়েন্ট ৩ বিলিয়ন ডলার। এখন আরও বেশি হবে। সুতরাং নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। বিশ্ব ব্যাংকের পরীক্ষা মানে আবার দুই বছর।

“আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো মতেই এটা চাননি। তিনিতো প্রথমচোটেই বললেন, আমি চালাতে পারব। আমি অবশ্য দেরি করি। আমি বলি, তাদের যে ভুল হয়েছে, সেটা আগে তারা স্বীকার করুক। তারপর যখন আমরা নৈতিক যুদ্ধটা জিতে নিব। তারপর ঠিক করব, কী করব।

“আমরা পদ্মাসেতু নিজের পয়সায় করছি। আমার ধারণা ২০১৮ সালে মধ্যে পদ্মাসেতু সম্পন্ন হবে।

“এটা যদি বৈদেশিক সহায়তায় হত তাহলে এটা ২০১৮ সালের মধ্যে হত কি না সে সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু এখন আমার কোনো সন্দেহ নাই।”

এ সময় প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলে উঠলেন, “টাকা তো আপনিই দিবেন।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “ইয়েস।”

তিনি বলেন, “এই যে আত্মবিশ্বাস। এটা আমাদের দেশের মানুষ করে দিয়েছে।