Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

39খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫: গাড়িতে দুই শিশুকে নিয়ে হিজাব পরে যেতে ভয় করে মা মিরভেট জুদেহর। মনে হয়, মুসলিম বুঝতে পেরে যদি কেউ হামলা করে বসে। তাই টুপি দিয়ে তিনি হিজাবটি ঢেকে রাখেন। কয়েক দিন আগেও স্বচ্ছন্দে সন্তানদের নিয়ে বাইরে যেতেন জুদেহ। গত ২ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোতে মুসলিম দম্পতির হামলায় ১৪ জন নিহত হওয়ার পর সব বদলে গেছে। এখন সব কিছুতেই ভয় পান জুদেহ। নিজের ধর্মীয় পরিচয় লুকাতে পারলে যেন বেঁচে যান।

জুদেহর মতো ক্যালিফোর্নিয়ার আরও অনেক মুসলিম পরিবার এরকম ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। মুসলিম বাবা-মায়েরা সন্তানদের সাবধান করে দিচ্ছেন। স্কুলে গিয়ে তারা যেন এমন কোনো আচরণ না করে, যাতে বিপাকে পড়তে হয়। ছোট ছোট শিশুদের মনে ধর্ম নিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দিতে খারাপ লাগলেও তাদের কিছু করার থাকে না।

আট বছরের ছেলেকে কখনো বন্দুক নিয়ে খেলতে দেন না মা জুদেহ। বারবার সাবধান করেন। বন্ধুরা বন্দুক নিয়ে খেললেও ভুলেও যেন সে তা না ধরে। মুসলিম বলে চলতে-ফিরতে অনেকই বাঁকা মন্তব্য ছুড়ে দেয় জুদেহর দিকে। আট বছরের ছেলেটি জানতে চায়, কেন সবাই তাদের সঙ্গে এ রকম করে। উত্তর খুঁজে পান না মা।

ঘটনা একটা নয়, পরপর কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। এসব হামলায় কোনো না কোনোভাবে মুসলিম জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বা তাঁদের দিকে সন্দেহের তির উঠেছে। গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসে জঙ্গি হামলায় ১৩০ জন নিহত হন। এর দায় নেয় আইএস। এর এক মাস না পেরোতেই ক্যালিফোর্নিয়ায় হামলা হয়।

প্যারিসে হামলার আগে থেকেই মুসলিমবিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী রিপাবলিকান প্রার্থী বেন কারসন সেপ্টেম্বর মাসে বলেন, মুসলিম ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম শরণার্থীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। তিনিও একই সুরে বলেন, সিরীয় শরণার্থী যাঁরা নিজেদের খ্রিষ্টান বলে প্রমাণ করতে পারবেন, তাঁরাই যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার অনুমতি পাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে সে দেশের সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছেন। কিন্তু কয়েকটি হামলা বদলে দিয়েছে সব কিছু। এখন মুসলিম মানেই যেন উগ্রপন্থী। ২৭ বছরের সারা হা“াদ নর্থ ক্যারোলাইনায় ক্যানসার গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। বললেন, ‘কিছুতেই বোঝানো যায় না মুসলিম বলেই আমরা সবাই উগ্রপন্থী নই। আমরাও ফুটবল খেলা দেখতে পছন্দ করি। পপ গান শুনতে ভালোবাসি। মা-বাবার সঙ্গে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালন করি। আমাদের সন্তানেরা সান্তা ক্লজকে দেখলে আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্তু দিন শেষে আমাদের পরিচয় কেবল মুসলিম।’

সারা বলেন,৯ / ১১-এর হামলার পর তাঁর কৈশোর ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। তিনি চান না তাঁর ছয় মাসের মেয়েটিও একইরকম যন্ত্রণা পাক। বাল্টিমোরের বাসিন্দা আরিফ খান বলেন, তিনি চান না তাঁর ছেলে বন্দুকের গুলি বা হামলার ঘটনা শুনে বেড়ে উঠুক। মুসলিম বলে লজ্জা পাক। কিন্তু কাউকে বোঝানো যায় না, সব মুসলিমই উগ্রপন্থী নয়। রয়টার্স অবলম্বনে