Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

23খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার,২২ ডিসেম্বর ২০১৫: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহিনা উদ্দিনকে হত্যার দায়ে তাঁর পরিবারের ৬ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে শাহিনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী সালমা বেগমকে (৩২) ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্যাতনে সহায়তা এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অপরাধে শাহিনার চার ভাই এবং এক বোনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার সেন্ট আলবান্স ক্রাউন কোর্ট এই রায় ঘোষণা করেন। নিজ পরিবারের সদস্যকে হত্যার দায়ে এক সঙ্গে ৬ জন ব্যক্তির সাজা হওয়ার ঘটনা যুক্তরাজ্যে অনেকটা নজিরবিহীন।

২০১৪ সালের অক্টোবরে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১৯ বছর বয়সী শাহিনাকে মৃত অবস্থায় তাঁদের বাসার শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে শাহিনার শরীরে ৫৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য শাহিনা পাঁচ ভাই, এক বোন ও বড় ভাবির সঙ্গে লন্ডনের অদূরে হার্টফোর্ডশায়ারের ওয়াটফোর্ডের লিভেসডেন রোডের একটি বাসায় বসবাস করতেন।

আদালতের শুনানিতে বলা হয়, পরিবারটির কর্তৃত্ব ছিল ভাবি সালমা বেগমের হাতে। ননদ কিংবা দেবরেরা কথা না শুনলে সালমা তাঁর স্বামী সুহেলকে দিয়ে শায়েস্তা করাতেন। সালমা তার ননদ শাহিনাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পাশাপাশি ঠিকমতো খাবার কিংবা পানি খেতে দিতেন না। তাঁকে শৌচাগারে যেতে না দিয়ে কিংবা ঘুমাতে না দিয়েও নির্যাতন চালানো হতো। এমনকি তাঁকে নিজের বমি এবং শৌচাগারের পানি খেতে বাধ্য করা হয়। শাহিনার প্রতি তাঁর ভাবির আচরণ ছিল রীতিমতো কৃতদাসের মতো।

এসব নির্যাতনের বিষয়ে শাহিনা পরিবারের বাইরের কাউকে কখনো কিছু বলেনি। পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে শাহিনা লেখেন, ‘প্রত্যেকদিন আমি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে পার করছি। এভাবে আমি আর বাঁচতে পারব না। তোমরা আমার প্রতি যা করেছ তা আমি কখনো ভুলব না’।

সরাসরি হত্যার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেও শাহিনার বড় ভাই সুহেল উদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাহিনার অন্য তিন ভাইয়ের মধ্যে ৩৩ বছর বয়সী জুহাল উদ্দিনকে নয় বছর, ২৭ বছর বয়সী জুয়েল উদ্দিনকে আট বছর এবং ২৪ বছর বয়সী তুহেল উদ্দিনকে সাড়ে ছয় বছরের সাজা দেওয়া হয়। শাহিনার ২২ বছর বয়সী বোন রাহিনা উদ্দিনকে দেওয়া হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নির্যাতনে সহায়তা এবং হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলেও পরিবারের কোনো সদস্য জানাননি ঠিক কী কারণে শাহিনাকে নির্যাতন করা হতো।