Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫: আসন্ন পৌর নির্বাচনে ভোটে সেনা মোতায়েনে বিএনপি ইসি পর্যন্ত দৌড়ঝাপ করলেও সে দাবি নাকচ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
“পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেছি, এখন পর্যন্ত ও রকম (সেনা মোতায়েনের মতো) পরিস্থিতি বা আলামত সৃষ্টি হয়নি।”
মঙ্গলবার বিএনপির প্রতিনিধি দল দাবি জানিয়ে আসার পর সিইসি সন্ধ্যায় তার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
এর আগে বিকালে আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসে। একদিন আগেই দলটির চেয়ারপারসন এই দাবি তুলেছিলেন।
ইসি আগেই বলে আসছিল, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন দেখছে না। তবে বিএনপির দাবি, নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না হওয়ায় সেনা মোতায়েন প্রয়োজন।
সিইসির সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিল, সেনা মোতায়েন না হলে কী করবে তার দল?
সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে আসা বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক তখন বলেছিলেন, ইসির সিদ্ধান্ত জানার পর তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন।
সিইসির বক্তব্য পাওয়ার পর বিএনপির কোনো নেতার প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
তবে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সন্ধ্যায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই নির্বাচন অবাধ ‍ও সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
গত মাসে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি সেনা মোতায়েনের কোনো দাবি তোলেনি। ইসিও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বাদ রেখেই পরিকল্পনা সাজায়।
সোমবার দলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া সেনা মোতায়েনের দাবি তোলেন। একদিন বাদেই তার দলের প্রতিনিধি দল এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে শেরেবাংলা নগরে ইসি সচিবালয়ে যান।
এখন কেন সেনা মোতায়েন চাইছেন- জানতে চাইলে মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, “দুই সপ্তাহ আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন।
মঙ্গলবার ভোটের প্রচারে পটুয়াখালীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি নেতা, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি; দলটির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা এই হামলা চালায় মঙ্গলবার ভোটের প্রচারে পটুয়াখালীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি নেতা, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি; দলটির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা এই হামলা চালায়।
“এখন নতুন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা মোতায়েন করতে অনুরোধ করেছি আমরা।”
মঈন খান দাবি করেন, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় প্রথম নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের প্রচার চালাতে নানাভাবে বাধা নেওয়া হচ্ছে।
“দুই সপ্তাহ ধরে যে জুলম-নির্যাতন চলছে দলের নেতাকর্মীদের ওপর, তাতে আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”
প্রশাসন ও সরকারদলীয় লোকজন যে পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে বিএনপির জন্য সমান সুযোগ থাকছে না, বলেন তিনি।
৩০ ডিসেম্বরের এই ভোট নিয়ে তিন দিন আগে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক করে ইসি। বৈঠকের পর সিইসি কাজী রকিব বলেছিলেন, পরিস্থিতি ভালো আছে, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “উন্নত বিশ্বে ভোটে কোনো বাহিনী নিয়োগ হয় না, পুলিশও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে মোতায়েন করা হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন না হওয়ায় এটা হচ্ছে।”
বিএনপি সমান সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সিইসি বলেন, নিরপেক্ষভাবে মাঠ কর্মকর্তাদের কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
দুই শতাধিক পৌরসভার মধ্যে কয়েকটি স্থানে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং তা পর্যালোচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কাজী রকিব।
“সবাই একসঙ্গে বসে হাসবেন, ঠাট্টা করবেন, পলিটিক্সও করবেন, আর কারও মাথায় বাড়ি দেবেন না- দুর্ভাগ্য যে এখনও আমাদের এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি।”
ভোটের পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদনও আসছে। জনগণ যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।সে বিষয়ে সচেষ্ট আছি, থাকব।”
ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের বেশিক্ষণ না থাকার জন্যও বলেছেন সিইসি।
“আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, যাদের কার্ড দেব, যাদের আমরা এলাউ করব, তারা ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন। কিন্তু আপনারা গোপন কক্ষের দিকে ক্যামেরা তাক করবেন না, ওদিকে যাবেন না। আপনার বেশিক্ষণ থাকবেনও না।”
ইসি যা চাইবে, তাই পাবে: স্বরাষ্ট্র সচিব
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইসির চাওয়া অনুসারেই বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান মঙ্গলবার বিকালে পৌর নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভার পর সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যা যা চেয়েছেন, তা কম দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পারলে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা বাড়াব।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “কোনো কেন্দ্রে যদি তিনজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাওয়া হয়, সেখানে আমরা তিনজন তো দেবই, কম দেব না, পারলে চারজন দেব।”
নির্বাচনযোগ্য ২৩৪ পৌরসভায় প্রায় ৭১ লাখ ভোটার রয়েছে। এতে কেন্দ্র রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। মেয়র পদে ৯২৩ এবং কাউন্সিলর পদে ১১ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
শনিবারের আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকের পর মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিইসি স্বাক্ষরিত ইসির সিদ্ধান্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সেনা মোতায়েনের কোনো কথা নেই।
ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। তারা ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর তারা দায়িত্ব পালন করবে।
সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় প্রতি কেন্দ্রে ১৯/২০ জন করে মোট ৭০ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে। মোবাইল, স্ট্রাইকিং, স্ট্যাটিক ফোর্স মিলিয়ে থাকবে আরও প্রায় ৮ হাজার সদস্য।
গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা জানতে চাইলে সচিব বলেন, “এ সংখ্যা বলা কঠিন। একটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হল, কিন্তু দেখা গেল, অন্য কেন্দ্রে ঝামেলা ঘটেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কিছু ঘটল না। তাই অগ্রিম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা বলতে চাচ্ছি না।”
দুই একদিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হবে বলে জানান তিনি।