খোলা বাজার২৪,বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেনে সেনাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় কলকাতার এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক সেনা সদস্যকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পলাতক দুই সেনা সদস্যকে ধরার চেষ্টা চলছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
গত রোববার হাওড়া-অমৃতসর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঝাড়খন্ডের মধুপুর স্টেশনে ট্রেনটির সেনা কামরায় তল্লাশি চালিয়ে ওই কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিশোরীর স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
পরিবার ও পুলিশের ভাষ্য, কলকাতার দমদম এলাকার ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় যাচ্ছিলেন। ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক ছেলে বন্ধুর কাছে যাচ্ছিল সে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, হাওড়া স্টেশনে এসে হাওড়া-অমৃতসর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠে ওই কিশোরী। ট্রেনে তার কোনো সংরক্ষিত টিকিট ছিল না। ট্রেনের সাধারণ কামরায়ও বসার আসন ছিল না। পরে ওই কিশোরী ট্রেনে সেনাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা তিন সেনা ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করে।
পরিবার জানায়, ট্রেনে উঠেই ওই কিশোরী বাড়িতে খুদেবার্তা (এসএমএস) করে জানিয়ে দেয় যে, সে হাওড়া-অমৃতসর এক্সপ্রেসে করে লুধিয়ানা যাচ্ছে। বিষয়টি কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে জানায় পরিবার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি বিষয়টি ঝাড়খন্ড পুলিশকে জানায়।
পুলিশ জানায়, কিশোরীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তারা রেল পুলিশকে জানানো হয়। রাতে ট্রেনটি ঝাড়খন্ডের মধুপুর স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় ঝাড়খন্ড পুলিশ ও রেল পুলিশ যৌথভাবে ট্রেনে তল্লাশি চালায়। ট্রেনের সেনা কামরা থেকে কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মধুপুরে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে রেল পুলিশ। একই সঙ্গে কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
রেল পুলিশের উপপরিদর্শক পি জোনি বলেছেন, পরীক্ষায় গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ট্রেন থেকে মঞ্জরীশ ত্রিপাঠী নামের এক সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজন সেনা জওয়ান পলাতক রয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ও গ্রেপ্তার হওয়া সেনা সদস্যকে গতকাল মঙ্গলবার হাওড়ায় নিয়ে আসা হয়। হাওড়া আদালতে ওই কিশোরী বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়। গ্রেপ্তার হওয়া সেনা সদস্যকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
পুলিশ জানায়, গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠা পলাতক দুই সেনা সদস্যকে ধরতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
সেনাবাহিনীর কলকাতার ইস্টার্ন কমান্ডের কর্মকর্তারা হাওড়া গিয়ে ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন।
সেনা কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের বাহিনীতে বিশৃঙ্খলার কোনো জায়গা নেই। অভিযোগ ওঠা সেনা সদস্যদের দোষী হলে তাঁদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। পলাতক সেনা সদস্যদের গ্রেপ্তারসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে।