খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে।
তিন বছর আগের এ মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদের রায় দেওয়ার দিন ঠিক রয়েছে।
সকালে এ মামলার আসামি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের বহিষ্কৃত ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে পুলিশ হেফাজতে কারাগারে নেওয়া হয়।
তবে এ মামলার প্রধান আসামি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রসাশনের ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের পর গত সোমবার আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন। সেদিন আসামি পক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, ফারুক আহমেদ ও জসিম উদ্দিন।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর দ্রুত নিষ্পত্তির এ মামলা ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
এঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।
রাজীব হত্যার পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে ছয় জনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এর আগে এ ধরনের হামলার শুরু হয় ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি; লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে দিয়ে, যিনি পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গত ১১ বছরের এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে প্রথম বিচার শেষে রাজীব হত্যা মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।
জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পেশায় স্থপতি রাজীব ব্লগ লিখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে, যেখানে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি।
আসামিদের মধ্যে জসীমকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় তার আগে মার্চ থেকে অগাস্টের মধ্যে।
মুফতি জসীমের উসকানিমূলক খুতবার বিষয়টি ছাত্রদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে।
গত ১৮ মার্চ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে আদালত।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন বিচারক।