Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

43খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৬ জানুয়ারি ২০১৬: প্রথমে মনে হতে পারে রূপকথার সিন্ডারেলা গল্প। দুদিন আগেই যাকে নিজের গলির বাইরে কেউ চিনত না, যার নাম তার স্কুলের গণ্ডির বাইরে কেউ জানত কি না সন্দেহ, সেই প্রণব ধানাওয়াড়ের নাম এখন সবার মুখে মুখে। তাঁকে নিয়ে মেতে উঠেছে পুরো বিশ্বের গণমাধ্যম। মুম্বাই থেকে লন্ডন, জোহানেসবার্গ থেকে সিডনি—ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে স্কুল ক্রিকেটের এক ইনিংস।
আলোচনা করতে অবশ্য সবাইকে বাধ্য করেছে প্রণব। ক্রিকেটে যে কারও পক্ষে একাই ১০০০ রান করা সম্ভব তা কি কখনো কেউ ভেবেছিলেন? একবার ব্যাটিং করতে নেমে চার অঙ্ক ছোঁয়া—এও কী সম্ভব! সেই অভাবিত বিষয়কেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে প্রণব। এই এক ইনিংস দিয়েই সবাইকে চমকে দিয়েছে সে। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সব পত্র পত্রিকা এখন তাকে নিয়েই পড়েছে। সে কে? কী করে? তার অতীতের ব্যাটিং রেকর্ড কী? তার স্বপ্ন কী? এই ইনিংসটি কী ভেবে খেলল সে!
প্রণবের গল্প শুনতে গিয়ে অবশ্য সিন্ডারেলার কথা মনে হবে না। সিন্ডারেলার জীবন তো বদলে গিয়েছিল জাদুর ছোঁয়া পেয়ে। কিন্তু প্রণব জীবনে যা পেয়েছে সব নিজের চেষ্টাতেই। জীবনের ছুড়ে দেওয়া প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সে জয় করেছে পরিশ্রম দিয়ে। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েছে প্রণব। তার বাবা প্রশান্ত পেশায় অটো রিকশাচালক। ছেলের ক্রিকেট খেলার নেশা দেখে অর্থ কষ্টের মাঝেও নয় বছর বয়স থেকে তাকে ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন সকালে অটো রিকশা নিয়ে বের হতেন। সেখান থেকে ফিরে দুপুরে ছেলেকে নিয়ে যেতেন ট্রেনিংয়ে। সেখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত। এভাবেই গত ছয়টি বছর পার করেছেন। বাবা-ছেলের এই জুটি তাদের কষ্টের ফল পেল গতকাল। ক্রিকেটের প্রথম ‘হাজারি’ প্রণবকে নিয়ে এখন ব্যস্ত সবাই।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি, ডেইলি মেইল এর মতো বিখ্যাত সব পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সনে খবর ছাপিয়েছে প্রণবকে নিয়ে। সবার শিরোনামেই বিস্ময়, ‘এক স্কুলবালকের বিশ্ব রেকর্ড, এক ইনিংসেই ১০০৯ রান করল প্রণব ধানাওয়াড়ে!’
দরিদ্র পিতার পক্ষে ছেলের ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। এ নিয়ে খানিকটা হতাশার সুর প্রশান্তের কণ্ঠে, ‘ক্রিকেটের সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি। আমি ওর জন্য স্পনসর খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম অনেক। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে ওকে আগে নাম কামাতে হবে।’
প্রণব কিন্তু নিজেকে চিনিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেট ইতিহাসেই নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছে সে। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার টুইট করে তাকে দিয়েছেন এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। চেষ্টা করলে যে যেকোনো কিছুই সম্ভব সেটি আবারও মনে করিয়ে দিল প্রণব।