Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

57খোলা বাজার২৪,শনিবার,৯ জানুয়ারি ২০১৬: ক্লাস নাইনের দুই পড়ুয়া। তারা পৌঁছে গিয়েছে সোনাগাছিতে। কারণ, প্রেমের সম্পর্কে তারা জড়িয়ে পড়েছে। এবং, তার-ই জেরে যৌন সুখের উল্লাসে মেতে উঠতে চাইছে ওই দুই পড়ুয়া। কিন্তু, যৌনপল্লিতে কেন!! সূত্র: অনলাইন।
কারণ, ‘খোঁজখবর’ নিয়ে তারা এমন জানতে পেরেছে, সোনাগাছিতে ঘর ভাড়া পাওয়া যায়। এবং, সেখানে তারা ‘নিরাপদে’ মেতে উঠতে পারবে যৌনতায়। তেমনই, দুই কলেজ পড়ুয়াও। ‘খোঁজখবর’ নিয়ে তাঁরাও এমন জানতে পারেন, যৌনতা উপভোগের জন্য অন্য কোনও জায়গার বদলে তুলনামূলক ভাবে বেশি ‘নিরাপদ’ হবে সোনাগাছির কোনও ঘর।
তবে, যৌন সুখের উল্লাসে মেতে ওঠার জন্য কোনও যৌনপল্লির কোনও ঘর-ই যে ওই ধরনের কোনও কিশোর-কিশোরী অথবা তরুণ-তরুণীর ক্ষেত্রে আদৌও ‘নিরাপদ’ কোনও স্থান-ই নয়, সেই বিষয়টি জানতেও তাঁদের খুব বেশি সময় নষ্ট হয়নি। কেননা, যৌনতা উপভোগের জন্য সোনাগাছির কোনও ঘর সাধারণত এই ধরনের কাউকে ভাড়া দেওয়া হয় না। এবং, কোনও ভাবে ভাড়ায় ঘর মিলে গেলেও, থেকে যায় অন্য বিভিন্ন সমস্যাও। যেমন, কোনও যৌনপল্লিতে কোনও সমাজবিরোধীর আনাগোনা অসম্ভব নয়। তেমনই, যে কোনও যৌনপল্লিতে যে কোনও সময়েই হতে পারে পুলিশি হানা।
কিন্তু, শুধুমাত্র যেমন এমন দুই ঘটনাও নয়। তেমনই, ওই কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীর কাহিনিও আবার বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনাও নয়। কেননা, বিভিন্ন সময় এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থাকতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মীদের অন্যতম সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটিকে। শুধুমাত্র যে সাক্ষী থাকতে হচ্ছে, তাও নয়। বরং, আগের তুলনায় এই ধরনের আরও বেশি ঘটনার এখন সম্মুখীন হচ্ছে ওই সংগঠন। তেমনই, শুধুমাত্র যে নিজেদের ইচ্ছায় যৌন সুখের উল্লাসে মেতে ওঠার জন্য সঙ্গীর সঙ্গে কোনও কিশোরী অথবা তরুণী সোনাগাছি অথবা এ রাজ্যের কোনও যৌনপল্লির ঘর খোঁজ করছেন, তাও নয়।
কেননা, বিভিন্ন সময় দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটিকে অন্য বিভিন্ন ঘটনারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সে সবের মধ্যে এমনও হয়: কোনও কিশোরী অথবা তরুণীকে সেখানে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁদের-ই নিকট কোনও আত্মীয় অথবা পরিচিত। ওই কিশোরী অথবা তরুণীর সঙ্গে ওই আত্মীয় অথবা পরিচিতর প্রেমের সম্পর্ক যে থাকতে পারে না, তাও নয়। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি সূত্রের খবর, এমনও হচ্ছে যে, কোনও কিশোরী অথবা তরুণীকে এই শহর দেখাবেন বলে কলকাতায় নিয়ে এলেন তাঁর কোনও আত্মীয় অথবা পরিচিত। কিন্তু, ওই কিশোরী অথবা তরুণীকে সোনাগাছিতে নিয়ে গেলেন তাঁর ওই আত্মীয় অথবা পরিচিত। কারণ, শহর দেখানোর নাম করে ওই কিশোরী অথবা তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে চান নিকট ওই আত্মীয় অথবা পরিজন।
কিন্তু, যৌন সুখের উল্লাসে নিশ্চিন্তে মেতে ওঠার জন্য এ ভাবে কেন-ই-বা ‘নিরাপদ’ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে সোনাগাছি অথবা অন্য কোনও যৌনপল্লিকে? দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি সূত্রের খবর, যৌনপল্লি সম্পর্কে অনেকের-ই সেভাবে ধারণা নেই। যে কারণে, ওই সংগঠনকে এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে, এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে কোনও মতেই সমর্থন করে না পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মীদের অন্যতম সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। ওই সংগঠনের সচিব ভারতী দে বলেন, ‘‘দুর্বারের কোনও মেয়ে বাদে অন্য কেউ এখানে ঘর ভাড়া নিতে পারে না। ’’ তবে, একই সঙ্গে তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘‘কোনও কোনও সময় বাইরের কেউ ঘর ভাড়া পেয়ে যায়। যে যা যাঁরা এ ভাবে ঘর ভাড়া দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিই। ’’
কিন্তু, সোনাগাছি অথবা কলকাতা সহ এ রাজ্যের অন্য কোনও যৌনপল্লিতে কেন ঘরের খোঁজে আসছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মহিলা-পুরুষরা? কারণ, দুনিয়া ক্রমে আরও বদলে চলেছে। আর, তার সঙ্গে বদলে চলেছে যৌনতার সংজ্ঞাও। অন্যদিকে, যৌনতা যে জীবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেই বিষয়েও চিন্তা-ভাবনায় ক্রমে আরও পরিবর্তন ঘটছে। আর, এমনই নানা কারণে, যৌন সুখের উল্লাসে মেতে ওঠার জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘নিরাপদ’ স্থান মনে করে বেছে নেওয়া হচ্ছে যৌনপল্লির কোনও ঘর। তবে, ভারতী দে বলেন, ‘‘দুর্বারের ফিল্ড ওয়ার্কাররা সতর্ক রয়েছেন। বাইরের কেউ যদি এখানে কখনও ঘর ভাড়া পেয়ে যান, তা হলে আমাদের কাছে খবর চলে আসে। নাবালক কোনও মেয়ের জন্য কোনও ঘর যদি কেউ ভাড়া দেন, তা হলে, আমরা তাকে পুলিশের কাছে তুলে দিই। ’’
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সচিব বলেন, ‘‘ক্লাস নাইনের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে কিছুটা সময় ওরা একসঙ্গে কাটাতে চেয়েছিল। এত কম বয়স। তাই ওদেরকে পুলিশের কাছে তুলে না দিয়ে, ওদের অভিভাবকদের খবর পাঠানো হয়। তার পর, অভিভাবকদের বুঝিয়ে, তাঁদের সঙ্গে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ’’ সেভাবে না বুঝে ক্লাস নাইনের ওই দুই পড়ুয়া সোনাগাছি পৌঁছে গিয়েছিল। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি এমনই মনে করে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে ওই দুই পড়ুয়াকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হলে, তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে, তাদের অভিভাবকদের কাছেই ওই দুই পড়ুয়াকে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, কলেজ পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে? ভারতী দে বলেন, ‘‘প্রাপ্তবয়স্ক হলেও, ঘর ভাড়া নিয়ে কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটানোর জন্য জায়গা নয় সোনাগাছি অথবা অন্য কোনও যৌনপল্লি। এ কথা কলেজের ওই ছাত্র-ছাত্রীকে বোঝানো হয়েছিল। পুলিশ হানা দিলে তাঁরা যে সমস্যায় পড়তে পারেন, সেই বিষয়টিও বোঝানো হয়েছিল। ’’
তবে, স্কুল-কলেজের ওই ধরনের পড়ুয়াদের থেকেও দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির কাছে অনেক বেশি চিন্তার কারণ কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এবং তার সঙ্গীর বিষয়টি। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সচিব বলেন, ‘‘কলকাতা দেখাবে বলে নাবালিকা একটি মেয়েকে সোনাগাছিতে নিয়ে এসেছিল ওর কাকা। বিষয়টি আমাদের নজরে আসতেই আমরা পুলিশের সহায়তা নিয়েছি। কারণ, কিছু সময়ের জন্য এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে ওই নাবালিকার সঙ্গে তার কাকা যৌন সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিল। ’’ একই সঙ্গে ভারতী দে বলেন, ‘‘আত্মীয় অথবা পরিচিত কেউ, এ ভাবে অনেক সময় কোনও নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে অথবা তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে এখানে আসে ঘর ভাড়া নিয়ে কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটাবে বলে। এ সব ক্ষেত্রে আমরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিই।