খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার,১২জানুয়ারি ২০১৬:নরসিংদী থেকে তোফাজ্জল হোসেন ঃ নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রসমূহে বহিরাগতদের আমদানী, ভোটার লাইন দখল করে অবাধে সীল মাারমারি, ব্যাপক জাল ভোট প্রদান, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম, ককটেল মারামারি, বুথের ভিতর ছাত্রলীগ রেখে বাইরে উদ্দেশ্যমূলক কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মাধবদী পৌরসভার পূন: নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে কমবেশী ১৫/১৬টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলাকালে ককটেল বিস্ফোরন ও অবাধ সীলমারামারির কারনে নির্বাচন কমিশন ছোট মাধবদী ভিটিপাড়া বেসরকারী মাদ্রাসার ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে। জালভোট প্রদানকালে ৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করা হলেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে বহুসংখ্যক জালভোট প্রদানকারী লীগ কর্মীদের।
সকাল ৮টায় মাধবদী পৌরসভার ১২টি ভোট কেন্দ্রে যথারীতি ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় সব কেন্দ্রেই মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। সাড়ে ৯টার পর থেকেই নরসিংদী জেলা শহর, সদর উপজেলা, আড়াইহাজার, রুপগঞ্জ ও পলাশ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মাধবদীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে এলাকায় পৌছে যায়। গোটা মাধবদী শহর বহিরাগত লীগ কর্মীদের দখলে চলে যায়। তারা রাস্তার বিভিন্ন এলাকায় জটলা পাকিয়ে দাড়িয়ে থাকে। বেলা ১০টার দিকে তারা ভোটার সেজে ভোট কেন্দ্রে ঢুকে লাইনগুলোতে অপেক্ষমান ভোটারদেরকে বের করে দিয়ে ভোটার লাইনগুলো দখল করে নেয়। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতারা ভোটার লাইনের অগ্রভাগে থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে ভিতরে ঢুকিয়ে অবাধে সীল মারতে শুরু করে। এসব ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ১৫/১৬ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল বেশী। এ অবস্থা চলে প্রায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে। এ খবর বিএনপি প্রার্থী হাজী মোঃ ইলিয়াছের নিকট পৌছলে তিনি টাটাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে জনৈক ভূয়া ভোটারকে চ্যালেঞ্জ করলে সে কোন জবাব দিতে পারেনি। ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে ফেলে। এসময় তিনি কেন্দ্রে উপস্থিত মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বুথের ভিতরে অবাধ সীলমারাসহ ভূয়া ভোটারের ঘটনাটি জানালে তিনি বলেন ভিতরে কি ঘটছে তা দেখবেন প্রিজাইডিং অফিসার। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই । নতুন ভোটারদের কোন আইডি কার্ড নেই। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এসময় হাজী ইলিয়াছ মিডিয়া কর্মীদেরকে জানান টাটাপাড়া কেন্দ্রসহ সারা কেন্দ্রেই ভূয়া ভোটাররা অবাধে বিচরন করছে। তারা ভিতরে ঢুকে অবাধে সীল মারছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত কেন্দ্র পুলিশের বেশ কড়াকড়ি পরিলক্ষিত হলেও ১২টার পর পুলিশ প্রহরা হঠাৎ করেই শিথিল হয়ে পড়ে। দেখা যায় প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ছাত্রলীগ কর্মীরা কাগজের নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে দলে দলে কেন্দ্র ঢুকছে আর এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। অনেক কেন্দ্রে অতি উৎসাহী কিছু আইনশৃংখলা কর্মী তাদেরকে অনায়াসেই ভিতরে ঢোকার সুযোগ করে দিচ্ছে। বেলা ১১টায় মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউশন ভোট কেন্দ্রে ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রথমে জাল ভোট ও পরে অবাধে সীল মারে। এ খবর প্রকাশিত হাবার পর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন বেলা ১২ টা ১ মিনিটে এসপি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মাছুম বিল্লাহকে সাথে নিয়ে ৬টি ভোট বাতিল করে দেন।
বিভিন্ন কেন্দ্র যখন টিন-এজ ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় তখন বেলা পৌনে ১ টায় ছোট মাধবদী ভিটিপাড়া বেসরকারী মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে প্রথমে ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। পরে আশেপাশে আরো কমবেশী ১৫/১৬টি ককটেল বিস্ফোরনের আওয়াজ পাওয়া যায়। এসময় ভোট কেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক আতংক দেখা দেয়। প্রকৃত ভোটাররা ভোট কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটে বেলা পৌনে ২টায় ফজলুল করিম মাস্টার কিন্ডার গার্টেন স্কুল ভোট কেন্দ্রে। সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীরা লাইন দখল করে অবাধে সীল মারার সময় বেলা পৌনে ২টায় কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বিকট আওয়াজে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
এসময় পুলিং অফিসার, পুলিশ, আনসার, ভিডিপিসহ ভোটাররা দৌড়ে পালাতে থাকে। এর ঢেউ এসে পড়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের ভোটার লাইনেও। এসময় ভিতরে উপস্থিত লীগ নেতারা বলতে থাকে কিছুনা কিছুনা তোমাদের কাজ তোমরা কর। মুহূর্তের মধ্যেই ছাত্রলীগ কর্মীরা আবার ভোটার লাইনে দাড়িয়ে যায়। এরপর এ ভোট কেন্দ্রে প্রকৃত কোন ভোটারকে আর দেখা যায়নি। ভোট কেন্দ্রটি একেবারেই ভোটার শূন্য হয়ে যায়। ছাত্রলীগ কর্মীদের অবাধ সীলমারার কারনে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে বেলা ১টার মধ্যেই অধিকাংশেরও বেশী ভোট শেষ হয়ে যায় ।