Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬: বাবা-মা নাম রেখেছিল আদর করে আদুরি। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়ার পাপকে আঁকড়ে ধরে পরিবারের বোঝা হিসেবেই জীবন চলে যাচ্ছিল আদুরির। কিন্তু প্রাইমারী পেরুনোর পরই সেই বোঝাটা যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো
পরিবারের কাছে। তাই সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বেছে নিলো সবচেয়ে কঠিন এক পথ। আদুরি এখন আদি, ছন্দা, ঝুমা, টিনা, সুবর্ণা সহ আরও অনেক নামে পরিচিত শুধুমাত্র তাঁর পেশার কারণে।
তবে বর্তমানে মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অনেক নারীই এ পেশায় জড়িত হয়ে পড়ছে অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায়। তাই যৌন পেশা একসময় নিম্নবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আদুরি তাঁর জীবনের অপ্রকাশিত কিছু বাস্তব সত্য , মনের কথা শেয়ার করে। তার‍ কথোপকথনের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো–
প্রশ্ন: দেহব্যবসায় কেন এবং কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন?
উত্তর: আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশী ছিলনা, তাই কোথাও কোন ভালো কাজ পাচ্ছিলাম না। অল্প বেতনের চাকরি করে আমি চলতে পারছিলাম না। আর আমার ফ্যামিলিও বেশি পয়সাওয়ালা ছিলনা। তাই একদিন আমার এক বান্ধবির পরামর্শে এই পেশার সাথে জড়িয়ে পড়ি।
প্রশ্ন: প্রফেশন হিসেবে এই কাজে আপনার অনুভূতি কেমন?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর বললে সবাই ভাববে যে আমি মিথ্যা বলছি। তারপরেও বলি, সবাই ভাবে যে এই কাজে অনেক মজা অনেক আনন্দ কিংবা অনেক সহজ একটা কাজ। আসলে এই কাজে যেই কষ্টটা আমরা পাই সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
প্রশ্ন: কোন কোন এলাকায় এবং কোন কোন সময় আপনার কাজের চাপ বেশি থাকে?
উত্তর: আসলে কাজের চাপের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যখন তখন কল আসলেই যে কোন সময়েই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তবে বছরের শুরু এবং শেষে, ঈদের আগে ও পরে, বিভিন্ন উৎসবের সময় কিংবা বিভিন্ন পার্টি তে কাজের চাপ বেশি থাকে। পর্যটন এলাকা গুলোতে কাজ বেশি পাওয়া যায়। যেমন ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, কুয়াকাটা ইত্যাদি। তবে সারা বছর ঢাকার মধ্যেই বিশেষ করে গুলশান, বনানি, উত্তরা এসব এলাকায় কাজের চাহিদা বেশি থাকে।
প্রশ্ন: ব্যতিক্রম কোন স্মরনীয় অভিজ্ঞতার কথা বলবেন কি?
উত্তর: মনে পড়ার মত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে একটা ঘটনা বলতে হবে। সেটা হল- একদিন আমি কাজের জন্য রেডিসন হোটেলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর একজন ভিন্ন রকমের মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে আমার জীবনের সব কাহিনী শুনে খুবই কষ্ট পায়। এরপর সে আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয়। আমাকে ভালো কাজ দেবে বলে আশ্বাস দেয়। আমাকে অনেক টাকা দেয় এবং শপিং করে দেয়। সবচেয়ে অবাক করা কথা হল যে সে আমাকে এসব কথা শুনে একটুও স্পর্শ করেনি। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কোনদিন ভাবিনি যে এমন একজনের সাথে আমার পরিচয় হবে। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হল তার কিছুদিন পরেই সে একটা সড়ক দূর্ঘটনায় এ মারা যায়। এই বিষয়টা মনে পড়লেই আমার খুব কষ্ট পায়। অনেক খারাপ লাগে ঐ মানুষটার জন্য।
প্রশ্ন: এই পেশা থেকে আপনার আয় উপার্জন কেমন আস্তে
উত্তর: ইনকাম আসলে নিয়মিত ভালো হয় না। কোন মাসে খুব ভালো আবার কোন মাসে খুবই খারাপ সময় যায়। তবে সিজনের সুময় খুব বেশি হইলে ১ লাখও হয়ে যায় আবার খারাপ হলে ২০-৩০ হাজার হয়।
প্রশ্ন: এই পেশায় কতদিন?
উত্তর: ঠিক মনে নেই কতদিন। তবে ছয় সাত বছর হবে।
প্রশ্ন: আপনি এই জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান কি?
উত্তর: অবশ্যই চাই। কিন্তু চাইলেই পারিনা। ওরা আমাকে কাজ করতে বাধ্য করে। নানা রকম হুমকি দেয়। না পারি বাঁচতে না পারি ছাড়তে। আর এই কাজ ছেড়ে দিলে অন্য কোথাও কাজে গেলে আরও বেশি সমস্যাই পরতে হবে। সবাই খারাপ চোখে দেখে। অপমান করে। তাই চাইলেও পারিনা এই কাজ ছাড়তে।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
উত্তর: আমার ভবিষ্যতই তো শেষ। তার আবার পরিকল্পনা কি থাকবে বলেন। তবে আমার ছোট ভাইয়ের লেখা পড়া শেষের দিকে। ও ভালো চাকরি পেলে আমি আবার পরিবারে ফিরে যাব, সবার সাথে সুখে থাকব। আর আমি মেয়েদের নিয়ে একটা সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার ও বিউটি পার্লার চালু করবো।