Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

58খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬: ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকার এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন হিজড়াদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এ নিয়ে সরকার- ইসির পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা বক্তব্য আসছে।
সরকার হিজড়াদের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলেও নির্বাচন কমিশন এখনও তাদেরকে স্বীকৃতি দিতে পারে নি। এমনকি চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে তাদের জন্য তৃতীয় লিঙ্গের সুযোগ রাখা হয়নি।
তারা ভোটার হতে হলে এখনও মেয়ে অথবা ছেলেদের পরিচয় দিয়ে ভোটার হতে হচ্ছে। তাদের পরিচয় পত্রে ছেলে কিংবা মেয়ের নাম দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কয়েক বার সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে ইসিকে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতার কারণে হিজড়াদের এখনও স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুসা বলেন, হিজড়াদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেইনি ইসি।চলমান ভোটার তালিকাতে হিজড়াদের আলাদা কোন অপশন রাখা হয়নি। হিজড়ারা ভোটার হতে চাইলে মেয়ে অথবা ছেলের পরিচয়ে ভোটার হতে পারবে। সাম্পতিক পৌরসভা নির্বাচনে দুই হিজড়া মেয়েদের নাম দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছ। আর চাইলেও এটি সহয়ে পরিবর্তন করতে পরবেনা ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামীতে হয়ত জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনে নির্ধারিত ফরমে নারী, পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া লিঙ্গ পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। তবে কাজটি অনেক জটিল।
গত এক বছর আগে হিজড়াদের আলাদা একটি লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পরিচয়প্রত্র দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসি কেন ব্যবস্থা নিলনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পর হয়ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ হাজারের ও বেশি হিজড়া রয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়। ফলে সরকারি সুবিধাও তাদের কাছে পৌঁছায় না। এ কারণেই সরকার তাদের তৃতীয় আলাদা লিঙ্গের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসাবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’। এছাড়া পত্রে ইংরেজিতেও ‘হিজড়া’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
জানা গেছে, ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারো লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসাবে।
বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের ‘নিচু’ দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গাতেই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সরকার আগেই তাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এদের স্বীকৃতি দিলেও নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি।