খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬: বাংলাদেশ প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে এগোতে চাইলেও, ভারতের অনীহার কারণে তা আটকে আছে। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় পানি স্বল্পতা কমবে, কমবে লবণাক্ততাও। ১৯৯০-এর দশকে গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত গঙ্গা নদী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানির একটি বড় উৎস। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের অংশ হিসেবে পানির স্বল্পতা আর লবণাক্ততা অঞ্চলটির জন্য অন্যতম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সে কারণেই এ বাঁধ প্রকল্পটিকে প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উ”চতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা দিন দিন বাড়ছে। তাই প্রস্তাবিত বাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে পানি ছাড়া যাবে, যাতে কমবে লবণাক্ততার মাত্রা। তবে ভারতের সহায়তা ছাড়া এ বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয় বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের তরফে এরইমধ্যে রাজবাড়ির পাংশা এলাকায় ২.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রস্তাবিত বাঁধটির নকশা প্র¯‘ত করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। তারপরও ভারতের সায় না পাওয়ায় থমকে আছে প্রকল্পটি।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠায় দিল্লি। সেখানে বলা হয়, ঢাকা থেকে পাঠানো প্রকল্প সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করেছেন ভারতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, বাঁধটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিতে পারে।
তাই বাঁধটি নির্মিত হলে ভারতীয় ভূখ-ে পানির উ”চতা বাড়বে না – এমন নিশ্চয়তা চেয়ে ঢাকাকে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা পরীক্ষার প্রতিবেদন এবং বৈজ্ঞানিক নকশা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে ভারতে সব কাগজপত্র পাঠানো হলেও, এখনও পর্যন্ত দেশটি এ ব্যাপারে সাড়া দিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সাত বছর সময় লাগবে আর তার জন্য বরাদ্দ লাগবে ৪০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীর দাবি, গঙ্গা নদীর ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে কৃষি ও মৎস উৎপাদন এবং ১১৩ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের খরচ উঠে আসবে। বাঁধটি নির্মাণের ব্যাপারে অর্থায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না কর্পোরেশন।
এছাড়া গঙ্গা বাঁধের মাধ্যমে ১৬৫ কিলোমিটার এলাকা পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তাতে থাকবে ২৯০ কোটি ঘন লিটার পানি ধারণের ক্ষমতা। বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীর দাবি, ১২৩টি আঞ্চলিক নদীর মাধ্যমে ২৬টি জেলায় এ পানি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। আর সারা বছর ধরেই ব্যবহার করা যাবে সংরক্ষণাগারের পানি।
বাংলাদেশের পানি এবং আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মো. ইমামুল হক জানান, ‘‘এই প্রকল্পে ভারতের অনীহা দেখানোর কোনো কারণ নেই। দরকার নেই তাদের সায় নেয়ারও। ভারত ফারক্কা বাধ নির্মাণের সময় কারুর সায় নেয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের কোনো ক্ষতি হবে – এই ধারণা অমূলক। কারণ গঙ্গার বাংলাদেশ অংশ গঙ্গার ভাটিতে। আমরা যে পানি পাই, তাই রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বহুমুখি ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।’’
প্রকৌশলী ইমামুল হক বলেন, ‘‘গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্পে ভারতের সায় নেয়ার নামে একটি মহল ভারতকে উসকে দিচ্ছে।’’
তবে তাঁর কথায়, ‘‘পাংশায় এই ব্যারেজ না করে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীতে করলে বাংলাদেশ আরো লাভবান হবে। জিকে প্রকল্পে পানি দেয়া যাবে। আর দেশের দক্ষিম-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে সুন্দরবন লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পাবে। সুরক্ষা দেওয়া যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বনজ সম্পদেরও।