খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬: মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানোর পর বিদেশ থেকে হুমকিও পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গে বলেন, “পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে, কোনো একটা বিশেষ ব্যক্তিত্বের একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকা, না থাকার ওপর। আমাকে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে।”
ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে সরকারের নানা ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন। তবে তা অস্বীকার করে আসছেন নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি।
বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান তিনি।
এরপর থেকে সরকারের সঙ্গে ইউনূসের বদানুবাদ চলছিল। এর মধ্যেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু থেকে সরে যায় বিশ্ব ব্যাংক।
শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “এই পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দুর্নাম দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাৃ মূল টার্গেট ছিলাম, আমি, আমার পরিবার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সচিব, কেউই বাদ যায়নি।”
তখন বিশ্ব ব্যাংককে সন্তুষ্ট করতে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
এরপর বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে অর্থায়নে ফিরে এলেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েন চলতে থাকে। এক পর্যায়ে সরকারই বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে।
শেখ হাসিনা ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এমন ভাবে একটা ধোঁয়াশা অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেন আমরা দুর্নীতি করে সব টাকা লোপাট করে দিয়েছি।”
“একটি পয়সা তারা দেয়নি, তার আগেই এই ধোঁয়া তোলো হল।”
“সেটা কেন, কার প্ররোচনায়, সেটা আমি বলতে চাই না। আপনারা ভালো করেই জানেন,” বলেন শেখ হাসিনা।
তখন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
“আমেরিকার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে সরাসরি বলেছেন, এটা না করলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে। এই কথা সরাসরি আমাকে শুনতে হয়েছে।”
“আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম, পদ্মা সেতু আমরা নিজেরা করতে পারব। আমরা তা পেরেছি।”
পদ্মা সেতুর কথা বলার সময় ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ফিরিয়ে দিতে সরকারের উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“নানাভাবে, নানা চাপ। দুটা বছর যেন আমাদের ওপর আজাব সৃষ্টি করা হয়েছিল।”
“আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করব। কেউ টাকা দিলে দেবো, না দিলে না দেবে। কিন্তু, আমরা যে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পারি- সেটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি।”
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই-মেইলে মুহাম্মদ ইউনূসের মেইলও পাওয়া গেছে, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকে পদ ফিরে পেতে হিলারির হস্তক্ষেপ কামনা করতে দেখা গেছে তাকে।