খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ : নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ভাড়া বাসায় ঢুকে দুই শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় এক ভাগ্নেসহ সাতজনকে সন্দেহের কেন্দ্রে রেখে তদন্ত চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরকীয়া সম্পর্ক ও সুদের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, এমন সন্দেহ করছেন নিহতদের স্বজন ও তদন্তসংশ্লিষ্টরা। খুনিরা নিহতদের পরিচিত ছিল বলেও মনে করছেন পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা।
হাসপাতালে ময়নাতদন্ত কমিটি জানিয়েছে, গলা কেটে নয়, মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে পাঁচজনকে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিহত গৃহবধূ তাসলিমা ও তাঁর ছোট ভাই মোর্শেদুল ওরফে মোশারফ দেনার দায় এবং একটি পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তিন মাস আগে তাঁরা বাবুরাইলের ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। এর আগে রাজধানীতে থাকা অবস্থায় তাসলিমার জা লামিয়ার (নিহত) সঙ্গে তাঁর স্বামীর ভাগ্নে মাহফুজের পরকীয়া সম্পর্ক ধরা পড়ে। এই সম্পর্কের কারণে তাঁরা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। এখানে আসার পরও মোর্শেদুলের কারখানায় কাজের সুযোগে আবার মামি লামিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন ভাগ্নে মাহফুজ। হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি টের পান তাসলিমা ও মোর্শেদুল। মামিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে পারিবারিক বিচারে মাহফুজকে শাস্তি দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়েছিলেন তিনি (মাহফুজ)।
এদিকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল এবং ঢাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিলেন তাসলিমা ও তাঁর ভাই মোর্শেদুল। কিন্তু ঠিকমতো সুদ ও ঋণ পরিশোধ না করায় ঋণদাতাদের মধ্যে চারজন তাঁদের হত্যারও হুমকি দিয়েছিলেন। শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে গৃহবধূ তাসলিমা (২৮), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ছেলে শান্ত (১০), তাসলিমার ছোট ভাই মোর্শেদুল ওরফে মোশারফ (২৫) এবং তাসলিমার জা লামিয়ার (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রবিবার নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় যে অভিযোগ করেছেন শফিকুল:
শফিকুল মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগান এলাকার নাজমা, শাহজাহানসহ কয়েকজন প্রায় ১২ লাখ টাকা পেত, যা মাসিক চক্র বৃদ্ধি হারে সুদে নেওয়া। পাওনা টাকার জন্য তারা প্রায়ই নারায়ণগঞ্জের বাসায় এসে হুমকি দিত। তাসলিমার ভাই মোশারফ হোসেন ওরফে মোরশেদের কাছেও ব্যবসায়ীক কারণে অনেকে টাকা পেত।
এছাড়া তার ছোটভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার কাছে ‘যৌন আবেদন’ করত ভাগ্নে মাহফুজ। লামিয়া বিষয়টি তার স্বামী শরীফ ও জা তাসলিমাকে জানিয়েছিলেন।
“আমার সন্দেহ উক্ত ব্যক্তিগণসহ অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা পরস্পরের যোগসাজশে গত ১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে ১৬ জানুয়ারি রাত ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম কর গলায় ফাঁস লাগিয়ে পাঁচ জনকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাসলিমা ও মোরশেদের মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।”
পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামির ঘরে অজ্ঞাতনামা আসামিরা উল্লেখ করেছে।
দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় (পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের যোগসাজশে খুন করার অপরাধ) দায়ের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদর মডেল থানার এসআই হামিদুল ইসলামকে।