Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1খোলা বাজার২৪, শনিবার ,২৩ জানুয়ারি ২০১৬ : কারাগারে আটক সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলার আসামি হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদের দুটি এফডিআর হিসাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন আদালত। প্রতিষ্ঠানটির আরেকজন মহাব্যবস্থাপকসহ চারজনের ছয়টি এফডিআর ও চারটি ব্যাংক হিসাবের বিষয়েও আদালত একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সম্প্রতি আদালত সূত্রে এই হিসাব অবমুক্ত করার আদেশের তথ্য জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই এফডিআর (স্থায়ী আমানত) হিসাবগুলো জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর আবেদনে বলেছেন, এই হিসাবগুলোতে আসামিদের আত্মসাৎ করা টাকার আংশিক সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৪ জুন উল্লিখিত ১২টি এফডিআর হিসাবসহ হল-মার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ২৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন ঢাকার তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক।
নতুন করে ১২ এফডিআর ও ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার আদেশের বিষয়ে জানেন না বলে জানান দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, তুষার আহমেদ হল-মার্ক মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ আসামি। তিনি কারাগারে আছেন। এই অবস্থায় তাঁর হিসাব অবমুক্ত করার আদেশ যদি হয়ে থাকে, তাহলে দুদকের উচিত এখনই তা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিভিশন আবেদন করা।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের ঋণের অর্থ সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়ে হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির দুটি ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই দুটি হিসাবে ২৬ কোটি টাকা ছিল। সোনালী ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত প্রথম আলোকে জানান, ঋণের দায় হিসেবে হল-মার্ক কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় হল-মার্কের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন আদালতে ২৭টি মামলার বিচার চলছে। আর মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার চলছে ১১টি মামলার। মামলাগুলোর প্রধান আসামি হলেন হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও তাঁর ভায়েরা প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) তুষার আহমেদ। তাঁরা দুজনই এখন কারাগারে আছেন।
তুষার আহমেদ ছাড়া হল-মার্কের যে চারজনের এফডিআর ও ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে বলেছেন আদালত, তাঁরা হলেন হল-মার্কের আরেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আসলাম উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী লুবনা সুলতানা এবং প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আবদুস সাত্তার মোল্লা ও রেজাউল করিম। মূলত এঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই গত বছরের ২৭ এপ্রিল হিসাবগুলো খুলে দেওয়ার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হাসান মোল্লা।
দুদকের নথিতে দেখা যায়, ১২টি হিসাবে মোট ১৭ কোটি টাকা জমা আছে। এর মধ্যে তুষারের দুই এফডিআর হিসাবে জমা ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আদালতে দেওয়া দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩২৯২ নম্বর এফডিআরে জমা অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক শূন্য ২ কোটি, যার উৎস হল-মার্ক গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) তুষার আহমেদ। নমিনি লুবনা সুলতানা। ১৩৩১৯ নম্বর এফডিআরে ১ দশমিক শূন্য ২৮ কোটি টাকা জমা আছে, যার উৎস টি এন্ড এন ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক হিসাব। এই হিসাবটি যৌথভাবে পরিচালনা করতেন হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ ও আসলাম উদ্দিন।
দুদকের উপপরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লা গত বছরের ১২ ফেব্র“য়ারি হল-মার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক ও এফডিআর হিসাব খুলে দেওয়ার ব্যাপারে দুদকের আপত্তি নেই বলে আদালতকে জানান। তবে জানতে চাইলে দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুদক এমন সুপারিশ করেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। একই কথা বলেছেন দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজলও। হিসাব খুলে দেওয়ার আদেশের বিষয়ে তিনিও কিছু জানেন না বলে জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. মুজিবর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই হিসাবগুলো জব্দ করেছিলেন আদালত। তিনিই গত বছরের ২৬ এপ্রিল তুষার আহমেদসহ হল-মার্ক গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই চারজনের ১২টি এফডিআর ও ব্যাংক হিসাবের বিষয়ে আদালতের আদেশে প্রতিবেদন দেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই ১২টি হিসাব আদালতে জমা দেওয়া এই মামলার (রমনা থানা ১৮(১০)১২) অভিযোগপত্রে উল্লিখিত টাকার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় বলে প্রতীয়মান হয়।’
জানতে চাইলে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. মুজিবর রহমান বলেন, ‘এই ব্যাংক হিসাবগুলোর ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। তবে আরও সময় নিয়ে তদন্ত করলে ভালো হতো।’
হল-মার্কের তুষারসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক ও এফডিআর হিসাব খুলে দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে দুদকের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন বিভাগের প্রধান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দুদক মতামত দিয়েছে। আর দুদকের মতামতের ভিত্তিতে যদি আদালত এসব হিসাব অবমুক্ত করতে বলেন, তাহলে আদেশটি হাতে পেলে যাচাই করে প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে রিভিশন করা হবে।
জানতে চাইলে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ দেখে যেটা মনে হচ্ছে, দুদক তথা রাষ্ট্র এসব দুর্নীতি মামলায় খুব বেশি সচেষ্ট ও মনোযোগী নয়। যেখানে জনগণের শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, সেই মামলার যদি এই অবস্থা হয়, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’