খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬:আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ। আর ২৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন তত্ত্বাবধায়কের কোনো প্রয়োজন নেই। ৯ ভাগ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে দেশ ভুল পথে চলছে বলে মনে করেন ৩২ শতাংশ মানুষ। পাশাপাশি ৭৯ শতাংশ মানুষ নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা যায়, দেশের ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন উন্নয়নের চেয়ে গণতন্ত্র বেশি জরুরি। কখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই জাতীয় নির্বাচন হোক। যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে ৩৬ শতাংশ মানুষ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বলে মত দিয়েছেন ৫৯ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ জোরালভাবে এবং ২৫ শতাংশ মৃদুভাবে এ মত দিয়েছেন। এছাড়া দুর্নীতি এখনও দেশের একটি বড় সমস্যা এবং সরকার সেটি মোকাবেলায় যথেষ্ট চেষ্টা করছে না বলে মত দিয়েছেন ৪৯ শতাংশ মানুষ।
কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থা আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা বিএনপির ওপর। ২৮ ভাগ কোনো মন্তব্য করেননি। ৫৯ ভাগ মনে করেন আওয়ামী লীগে শক্তিশালী নেতৃত্ব আছে। অন্যদিকে ১৯ ভাগের মতে বিএনপিরও শক্তিশালী নেতৃত্ব আছে ।
জরিপটির তত্ত্বাবধানে আরও ছিল গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারস। মার্কেটিং গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসেন-বাংলাদেশকে দিয়ে তারা এ জরিপ চালায়। গত ৩০ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ২ হাজার ৫৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। তাদের সবার বয়স ছিল ১৮ বছরের উপরে। জরিপে বিভিন্ন স্তরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেশের সাত বিভাগে জেলা অনুযায়ী এবং গ্রাম ও শহরে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
সব বিভাগের ৬৪ জেলায় ২৫৫টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিট (পিএসইউ বা প্রাইমারি স্যাম্পল ইউনিট) থেকে তথ্য/নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রামে এ ইউনিটকে মৌজা ও শহরে মহল্লা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রোব্যাবিলিটি প্রপোরশনাল টু সাইজ (পিপিএস) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম বাড়ি নির্বাচনের জন্য ডেট মেথড ও যথাযথ গৃহস্থালি বাছাইয়ের জন্য পদ্ধতিগত দৈব নমুনায়ন (সিস্টেম্যাটিক র্যান্ডম স্যামপ্লিং) ব্যবহৃত হয়েছে।
আইআরআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সংগঠন ও সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে নানা ধরনের জরিপ ও গবেষণা করে থাকে এ সংগঠনটি। বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে জরিপ পরিচালনা করে আসছে এ সংস্থাটি। ২০১৪ সালের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর এবং ২০১৫ সালের জুন ও নভেম্বরে মোট চারটি জরিপ পরিচালনা করে আইআরআই।
বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে : জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশ বর্তমানে সঠিক পথে যাচ্ছে নাকি ভুল পথে?’ জবাবে উত্তরদাতাদের ৬৪ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষা, যোগাযোগ, অর্থনীতির উন্নয়নের কারণে দেশ সঠিক পথেই রয়েছে। তবে ৩২ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, দেশ ভুল পথে আছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। ২০১৩ সালে একই সময় ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করত দেশ ভুল পথে যাচ্ছে।
দেশের ৭৯ ভাগ মানুষ দেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী। তাদের নিজেদের সক্ষমতা বেড়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার আরও উন্নতি ঘটবে। ১০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, একইরকম থাকবে। আর ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, খারাপ হবে। ৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন ভাত, মাছ, ডিম, ডালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের মতো যথেষ্ট আয় তাদের আছে।
৬৮ শতাংশ তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে : জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল- পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা উচিত কিনা- ৬৮ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এর বিপক্ষে আছেন ২৩ শতাংশ মানুষ। ৯ ভাগ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। গত জুনে পরিচালিত একই ধরনের জরিপে তত্ত্ব¡াবধায়কের পক্ষে ছিলেন ৬৭ শতাংশ মানুষ আর বিপক্ষে ছিলেন ২২ শতাংশ। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে ছিলেন ৭৭ শতাংশ আর বিপক্ষে ছিলেন ১৮ শতাংশ মানুষ।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কখন দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে ৫১ ভাগ মনে করেন বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন হোক। গত জুনে এ সংখ্যা ছিল ৪৩ শতাংশ। আর বর্তমানে (নভেম্বরে) ৩৬ শতাংশ মনে করেন যত দ্রুত সম্ভব এটি হওয়া উচিত। গত জুনে এ সংখ্যা ছিল ৪০ শতাংশ। এছাড়া দেশের ৮৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, গণতন্ত্রে সমস্যা থাকলেও অন্য যে কোনো ধরনের সরকারের চেয়ে তা ভালো।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা পুরোপুরি একমত যে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। জোরালভাবে না হলেও বিষয়টিকে সমর্থন করেন এমন উত্তরদাতা ছিলেন ২৫ শতাংশ। আর কোনোভাবেই এর সঙ্গে একমত নন ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা। ১২ শতাংশ কোনো মন্তব্য করেননি।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন উন্নয়নের চেয়ে গণতন্ত্র বেশি জরুরি। ৫১ শতাংশ মানুষ এটা মনে করেন। গত জুনের জরিপে ৬৮ শতাংশ মানুষ উন্নয়নের চেয়ে গণতন্ত্র জরুরি বলে মত দেন। আর বর্তমানে (গত নভেম্বর) ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন গণতন্ত্রের চেয়ে অর্থনৈতিক সাফল্যই জরুরি। যা গত জুনে এ সংখ্যা ছিল ২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ কোন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবেলা করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ৩২ শতাংশ মনে করেন দুর্নীতি, ৩৩ শতাংশের মতে বেকার সমস্যা এবং ২৮ শতাংশের মতে যানজট। তবে ২৫ ভাগ মানুষ মনে করেন নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এ মুহূর্তের অন্যতম সমস্যা।
সরকারের কোন বিভাগ ভালো বা খারাপ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৯ শতাংশ মনে করেন সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে খারাপ করেছে। দুর্নীতি এখনও একটি বড় সমস্যা এবং সরকার সেটি মোকাবেলায় যথেষ্ট চেষ্টা করছে না বলেই তারা মনে করছেন। ৮৪ ভাগ মনে করেন শিক্ষা খাতে সরকার ভালো করেছে। এছাড়া সরকার স্বাস্থ্য খাতে ৭৮ ভাগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ৭৩ ভাগ, জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি ৭২ ভাগ ভালো কাজ করেছে বলে জরিপে উঠে আসে।