Fri. Aug 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

22খোলা বাজার২৪, সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : আজ ১ ফেব্র“য়ারি, আইওয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা যাঁর যাঁর দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর প্রাথমিক নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। অধিকাংশ দেশে দলের কর্তাব্যক্তিরাই ঠিক করেন, কে সে দলের পক্ষে নির্বাচনে পদপ্রার্থী হবেন। আমেরিকায় সে অধিকার দলের তালিকাভুক্ত সদস্যদের। ‘ককাস’ ও ‘প্রাইমারি’ নামে পরিচিত প্রাক্-নির্বাচনী ভোটের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের ‘ডেলিগেট’ বাছাই সম্পন্ন করবেন। এ বছর জুলাই মাসে দুই দলের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় সম্মেলনে এই ডেলিগেটদের ভোটেই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। দেশের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই এই প্রাক্-নির্বাচনী ভোট হবে, আইওয়া দিয়ে সে প্রক্রিয়া শুরু, সে কারণে আইওয়া ‘ককাসের’ এত গুরুত্ব।
মোট ডেলিগেটের মাত্র ১ শতাংশ আইওয়া ককাসে নির্ধারিত হবে—রিপাবলিকানদের ৩০ ও ডেমোক্র্যাটদের ২৯ জন। তা সত্ত্বেও সবার চোখ এখন আইওয়ার দিকে। এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যাঁরা জনমত গণনায় এগিয়ে আছেন, তাঁরা কেউই দলের কর্তাব্যক্তিদের পছন্দের নয়। রিপাবলিকানদের মধ্যে বিলিয়নিয়ার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প সব হিসাব উল্টে দিয়ে এক নম্বরে রয়েছেন। দলের নেতাদের বিশ্বাস, এই লোক যদি শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন পান, তাহলে নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি ঠেকানো অসম্ভব হবে। ট্রাম্প শুধু যে হিস্পানিক ও মুসলিম অভিবাসীদের খেপিয়ে তুলেছেন তা-ই নয়, দলের সব প্রচলিত নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যাপারটা রিপাবলিকানদের জন্য এতটাই উদ্বেগজনক যে এ দেশের অন্যতম প্রধান রক্ষণশীল পত্রিকা, ন্যাশনাল রিভিউতে দেশের ২১ জন নামজাদা বুদ্ধিজীবী একযোগে ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে’ এই শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে যেভাবে হোক এই ভুঁইফোড় রাজনীতিককে ঠেকানোর আবেদন করেছেন।বার্নি স্যান্ডার্স
জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পকে যিনি ছুঁইছুঁই করছেন, টেক্সাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টেড ক্রুজ, নিজের দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর নাটকীয় ভূমিকার জন্য খ্যাতি অথবা কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। মূলধারার সম্পূর্ণ বাইরের এই রাজনীতিক আশা করছেন, অতি রক্ষণশীল ও কট্টর খ্রিষ্টান ‘ইভানজেলিক্যাল’দের ভোটে তরি তীরে ভেড়াতে সক্ষম হবেন। সবাই একমত, ট্রাম্পের মতো ক্রুজও দেশের সংখ্যালঘু ও মধ্যপন্থীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হবেন।
রিপাবলিকান নেতারা আশা করেছিলেন, হয় ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ অথবা একই অঙ্গরাজ্যের তরুণ সিনেটর কিউবান বংশোদ্ভূত মার্কো রুবিও মনোনয়ন ছিনিয়ে নেবেন। তাঁরা দুজনেই যাঁর যাঁর নির্বাচনী তহবিলে মোটা অঙ্কের চাঁদা পেয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে নামজাদা রাজনীতিকেরা সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের অতিনাটকীয়তা ও ক্রুজের অতিতপ্ত প্রচারণার মুখে তাঁরা দুজনেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন।
ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে অবস্থা একই রকম জটিল ও অবাস্তব। তিন মাস আগেও সবাই নিশ্চিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বিপুল জনসমর্থনে ধন্য হয়ে নিজ দলের মনোনয়ন হেলায় ছিনিয়ে নেবেন। কিন্তু বাস্তবে সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়নি। সারা দেশে হিলারির সমর্থন ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে ওঠেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পহিলারিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। প্রায় ৭৫ বছর বয়স্ক এই রাজনীতিক নিজেকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই ‘গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক’ হিসেবে পরিচয় করাতে ভালোবাসেন। তাঁর সমর্থনের একটি পরিমাপক হলো, এ পর্যন্ত তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছায় চাঁদা দিয়েছেন, তাঁদের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা চার বছর আগে ওবামা যে সংখ্যায় চাঁদা পেয়েছিলেন, তার চেয়ে ১০ লাখেরও বেশি। গড়ে মাত্র ২৭ ডলার চাঁদা পেয়ে গত বছরের শেষে তাঁর প্রাপ্ত মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার।
মজার ব্যাপার হলো, ট্রাম্প ও স্যান্ডার্সকে যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁদের মধ্যে আশ্চর্য মিল রয়েছে। ট্রাম্পের বেলায় তাঁর সমর্থকদের অধিকাংশই শ্বেতকায়, মাঝবয়সী ও স্বল্পশিক্ষিত। অব্যাহত অভিবাসনের কারণে ও মন্দাবস্থার দরুন এঁরা নিজের সরকার ও দলের রাজনীতিকদের ওপর খেপে আছেন। ‘আমেরিকান ড্রিম’ তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে, এ জন্য তাঁরা ওয়াশিংটনের রাজনীতিকদের দায়ী করছেন। আরও লক্ষণীয়, কৃষ্ণকায় ওবামাকে তাঁরা সাত বছর পরও প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি।
টেড ক্রুজঅন্যদিকে, চার বছর আগে যে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যার প্রভাবে ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন, বার্নি স্যান্ডার্স সেই সমর্থন-ভিতকে নিজের পক্ষে টানতে পেরেছেন। তাঁর কারণেই হিলারি ক্লিনটনকে অবস্থান বদলে বামমুখী হতে হয়েছে। যেমন, তিনি বরাবর আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে ওকালতি করেছেন, কিন্তু অতি সম্প্রতি সুর বদলে স্যান্ডার্সের দেখাদেখি সে চুক্তির বিরোধিতার কথা ঘোষণা করেছেন।
এ কথার অর্থ অবশ্য এই নয়, বার্নি স্যান্ডার্স বা ডোনাল্ড ট্রাম্পই যাঁর যাঁর দলের মনোনয়ন লাভ করবেন। জনসমর্থনে জাতীয়ভাবে স্যান্ডার্সের তুলনায় হিলারি প্রায় ২০ শতাংশ এগিয়ে আছেন। কিন্তু আইওয়া এবং ঠিক তারপরেই নিউ হ্যাম্পশায়ারে তিনি যদি পর্যুদস্ত হন, তাঁর নির্বাচনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ২০০৮ সালে অনিবার্য বিজয়ের মুখ থেকে তিনি ওবামার কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিলেন। তবে স্যান্ডার্সের সমর্থন-চক্র অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হওয়ায় ও সংখ্যালঘুদের নিজেদের পক্ষে টানতে অসমর্থ হওয়ায় চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা কম। তবে এ অবস্থা যে বদলাবে না, এ কথা বলা বোকামি।

অন্যরকম