Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

36খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : সুলতানা। বর্তমান নাম সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট। বয়স প্রায় ৪০ বছর। অভিভাবকহীন হওয়ায় মাত্র ৫ বছর বয়সে এই সুলতানাকে দত্তক নিয়ে গিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের একটি পরিবার। বর্তমানে সুলতানার নেদারল্যান্ডসে সুখের সংসার। ৮ বছর বয়সি এক ছেলে সন্তানের জননী তিনি। তবে নেদারল্যান্ডসে তার সুখের পরিবার হলেও দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর পর সুলতানা ফিরেছেন চট্টগ্রামে। স্বজনের খোঁজে।
সুলতানাকে দত্তক নেওয়ার একটি এফিডেভিটের তথ্যের সূত্র ধরে সুলতানা তার স্বামী ও একমাত্র সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছেন যদি কোনো স্বজনকে খুঁজে পাওয়া যায়, সেই আশায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা তার স্বজনদের খুঁজে পেতে সাংবাদিকদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন। সুলতানাকে বাংলাদেশে তার স্বজনদের খুঁজে পেতে সহায়তা করছে স্লোভ বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থা। এফিডেভিটে সুলতানার দত্তক দাতা অভিভাবক হিসেবে দাদি রহিমা খাতুনের নাম উল্লেখ থাকলেও সুলতানার বাবা-মায়ের কোনো নাম উল্লেখ নেই।
স্লোভ বাংলাদেশের ব্যানারে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা জানান, তার জন্ম ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া মহকুমার বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী গ্রামে। বাবা-মা মারা যাওয়ায় মাত্র চার বছর বয়সে তার দাদি রহিমা খাতুন কর্তৃক সুলতানাকে ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডসের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় দিয়ে দেন। নেদারল্যান্ডসের সেই সংস্থা থেকে খেয়া ও ক্রিস নামের এক দম্পতি সুলতানাকে দত্তক নিয়ে নেদারল্যান্ডসে চলে যান। খেয়া ও ক্রিসের আদর ভালোবাসায় নেদারল্যান্ডসে বড় হয়ে ওঠেন সুলতানা। সফলভাবে পড়ালেখা সম্পন্ন করে নেদারল্যান্ডসের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন সুলতানা। বিয়ে করেন ইউরি জ্যাকব নামক একজনকে। ইউরি জ্যাকব একজন ডিজাইনার। তাদের সংসারে আবিদ নাবিলা জ্যাকব নামের ৮ বছর বয়সি একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সুলতানার বর্তমান নাম সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট।
নেদারল্যান্ডসে সুখের সংসার, পরিবার-সন্তান থাকলেও সুলতানা বাংলাদেশে তার শেকড়কে কখনো ভুলতে পারেননি। সুলতানার দত্তক বাবা-মায়ের কাছ থেকে এফিডেভিটের কাগজটি হাতে পেয়েই সুলতানা স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার জন্য অস্থির ছিলেন। সর্বশেষ গত ১ ফেব্র“য়ারি স্বামী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর স্লোভ বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে তার আদি বাড়ি দোহাজারী উপজেলায় খুঁজতে থাকেন স্বজনদের। গত ৩ দিন ধরে অনেক খুঁজেও কোনো সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুলতানার পরিবার।
এই সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা জানান, তিনি তার স্বজনদের খুঁজে পেতে ব্যাকুল। তার বাবা-মা মারা গেলেও তার পরিবারের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এখনো বেঁচে আছেন। তাই তিনি তাদের কাউকে খুঁজে পেতে চান। একটু তাদের বুকে ঠাঁই পেতে চান।
সুলতানাকে সহায়তাকারী স্লোভ বাংলাদেশের কর্মকর্তা ইসমাইল শরিফ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সুলতানা তার স্বজনদের খুঁজে পেতে ব্যাকুল। তার বাবা-মা বেঁচে নেই জানা সত্ত্বেও সুলতানা চট্টগ্রামে এসেছেন যদি তার কোনো স্বজনকে খুঁজে পায়। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছি। ইতিমধ্যে তার আদি দাদা বাড়ি দোহাজারীতে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এখন সাংবাদিকদের সহায়তায় সুলতানা তার স্বজনদের খুঁজে পেতে চান।