Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

11খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ‘জিকা’ ভাইরাসের কারণে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ায় সম্প্রতি ছোট মস্তিষ্কের কয়েক হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ছোট মস্তিষ্কের শিশুর জন্মের পেছনে এডিস মশা দ্বারা ছড়ানো ‘জিকা’ ভাইরাসের সম্পর্ক থাকতে পারে। বাংলাদেশেও ছোট মস্তিষ্ক নিয়ে শিশু জন্মের উদাহরণ থাকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মৌসুমের আগেই এডিস মশা নিধনের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্বে ‘মাইক্রোসেফালি’ বা ছোট্ট মস্তিষ্কের শিশুর জন্ম বিরল নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ‘সিআরএস’ বা জন্মজনিত ত্রুটি জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১২ সালে ৬ জন, ২০১৩ সালে ১১ জন, ২০১৪ সালে ৩৫ জন এবং ২০১৫ সালে ২৫ জন মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয়। মাইক্রোসেফালি সনাক্তে সারাদেশের ১৯ টি সেন্টার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশুর মাথার আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি ব্রেইনের গঠনও সম্পূর্ণ হয় না।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসাইন্স অ্যান্ড হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক ও পিডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট ডা. শেখ আজিমুল হক জানান, মাইক্রোসেফালি মানে সারাজীবনের সমস্যা। শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে দু’টো কারণ পাওয়া গেছে; ১. মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকে জন্মের সময় পর্যন্ত শিশু অক্সিজেন কম পেলে, আর ২. গর্ভাবস্থায় বিশেষ কিছু ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত রুবেলা, টক্সোপ্লাজমা, সাইটোমেগালো জাতীয় ভাইরাসের কারণে শিশুরা মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এমনকি গর্ভবতী মা খুব বেশি অপুষ্টিতে ভুগলেও শিশু ছোট মাথা নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
‘তাই গর্ভবতী মায়ের জ্বর এবং ফুসকুড়ি দেখা দিলে, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা বা চোখ লাল হলে আমরা তাকে সতর্ক করবো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তার রুবেলা বা জিকা হয়েছে। জিকা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে জানার সুযোগ এখন বাংলাদেশে নেই,’ বলেন ডা. রেজাউল করিম।
জিকা ছাড়াও ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবেও মশা নিধনের ব্যবস্থা নেয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।
ব্রাজিল ও কলম্বিয়ায় একই সময় কয়েক হাজার মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর জন্মের পেছনে এডিস মশায় থাকা জিকা জীবাণুর জোর সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্তক করেছে। বাংলাদেশে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ আছে তাই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জানান, জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটির পরামর্শে মশা নিয়ন্ত্রণের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং মশার ঘনত্ব কমানোর জন্য ব্যবস্থাগুলো জোরদার করতে হবে যেনো জিকা বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে।
তার মতে, বাংলাদেশে মাইক্রোসেফালি থাকলেও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ আপাতত কম ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এখনই মশা নিধনে জোর দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি ও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই মশা নিধন হলে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ছাড়াও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো অনেকটাই সম্ভব হবে। তবে এখনো জিকার ঝুঁকি থেকে মুক্ত বাংলাদেশ।