Tue. Jul 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিএনপি ও খালেদা জিয়ার এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন দাবি করে অবিলম্বে তার (প্রধান বিচারপতি) পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্টের বাইরে মাজার গেট সংলগ্ন বটতলায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এক পর্যায়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে আমার বিষয়ে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। আমার বক্তব্যকে টুইস্ট করা হয়েছে। গতকাল আমি সংবাদ সম্মেলনে করিনি।’ তবে অনেক ‘নতুন তথ্য’ নিয়ে সামনে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান তিনি।
বার সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রধান বিচারপতির ‘মতে’ আপনার সাম্প্রতিক কার্যক্রমে বিচারবিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, চিফ জাস্টিস তো নিজেই বলেছেন, তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সাকা চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে মিটিং করেছেন। এতে করে কি বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না?’
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে অনুমতি ছাড়া প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না, সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
হাইকোর্টের মাজার গেইটের বাইরে থাকা বটগাছের নিচে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজকে দুপুর দেড়টায় আমার সিনিয়র নেক্সট বিচারপতি ইমান আলী সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফাইলগুলো তার কাছে যাবে। ওনার সাথে আমি আলাপ করেছি। উনি এটা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এখনি যাচ্ছি তার কাছে যাওয়ার জন্য। এর পরেই তিনি সুপ্রিমকোর্টের ভিতরে প্রবেশ করে ১৫টি রায় ও ৭০টি আদেশের কপি জমা দেন।
আপিল বিভাগ থেকে গত অক্টোবর মাসে অবসরে যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর তার হাতে থাকা রায় গুলো আপিল বিভাগ গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ করে রোববার প্রধান বিচারপতি বরাবরে চিঠি দেন অবসের যাওয়া এই বিচারপতি। চিঠি দেয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের মুল ভবনের পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি ব্যাখ্যা দেন। সে ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রায় জমা দিতে আসেন নি।
এদিকে সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে অনুমতি ছাড়া প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না। এরপর কোর্টের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে কোর্টের বাইরে মাজার গেইটে বটগাছের নিচে তিনি কথা বলেন বিচারপতি মানিক।
এ সময় তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত সুখবর আমি আপনাদের গতকাল বলেছি বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সাহেব কালকে সন্ধ্যায় উনি রায় গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। এটা খুশির খবর। আমার হাতে লেখা রায় ওনারা গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। এটা যদি প্রধান বিচারপতি না করতেন। তাহলে অনেক আগে রায় লেখা শেষ হয়ে যেতো।’
শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, রায় দিয়েছি এটা বলিনি, রায় নিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু উনি (বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব) নিতে অপারগ।
রোববারের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি গতকাল কেনো সংবাদ সম্মেলন করিনি। প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠির পর সাংবাদিকরা আমার কাছে এসেছে। তখন আমি বক্তব্য দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি রায় গুলো জমা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গত ৭ ফেব্র“য়ারি সুপ্রিমকোর্টের বিচারকাজ চলাকালীন কোর্ট প্রাঙ্গণে অবসরপ্রাপ্ত বিচারতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী একটি প্রেস কনফারেন্স করেন।যদিও সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এ ধরনের প্রেস কনফারেন্স নজিরবিহীন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সমাপ্ত হওয়া রায় ও আদেশগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিমকোর্ট বলেন, ওই বক্তব্য প্রধান বিচারপতির গোচরে এলে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন যে, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার কাছে লিখিত রায় কিংবা আদেশ গ্রহণ করার জন্য জমা দেননি।
সেই দিনই সকালে আপিল বিভাগের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অবসরের পর তার লেখা পূর্ণাঙ্গ রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি মানিকের তিক্ততার প্রকাশ্য এসেছে।
এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন, শপথভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার অভিসংশন চেয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে চিঠি লেখেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তবে আপিল বিভাগ কোনো চিঠি পায়নি বলে জানানো হয়।