Fri. Aug 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18খোলা বাজার২৪বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বিপর্যয়ে ব্যাট করতেই উপভোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মাইক্রোফোন-রেকর্ডারের সামনে যেমন অকপট কণ্ঠে এটি বলেন, ২২ গজেও তেমন প্রমাণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। অধিনায়কের আরেকটি বীরোচিত ইনিংস (৭৪ বলে ৬০) খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছে বাংলাদেশ যুব দলকে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ বলে শেষ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ২২৬ রান।
১১৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে পথে ফেরান মিরাজ। অধিনায়কের সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনের ৮৫ রানের জুটিতেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় লড়ার মত রান।
ক্যারিবিয়ান পেসাররা নিজেদের পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিতে সময় নেননি একটুও। ম্যাচের প্রথম বলেই আলজারি জোসেফের বাউন্সার উড়ে যায় পিনাক ঘোষের মাথার ওপর দিয়ে। গতি আর আগ্রাসন দিয়ে টুর্নামেন্টের আলোচিত এই ফাস্ট বোলার প্রথম ওভারে ৫টিই করেন শর্ট বল। একটি শর্ট বলে হেলমেটে লাগিয়ে নাড়িয়ে দেন পিনাককে।
শর্ট বলে স্রোতে নড়বড়ে হয়েই কিনা, পিনাক আউট হন বাজে এক বলে। শেমার হোল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পাঠিয়ে দেন থার্ডম্যানের হাতে! যুব ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দেড়শ’ রানের ইনিংস খেলা একমাত্র ব্যাটসম্যান এই বিশ্বকাপের ৫ ম্যাচে ৩ বারই আউট হলেন শূন্য রানে!
ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হতে পারেননি আরেক ওপেনার সাইফ হাসানও। জোসেফের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন, ধরা পড়েন শর্ট স্কয়ার লেগে (১০)।
জোড়া ধাক্কার পরও বাংলাদেশের শুরুটাকে খুব খারাপ বলা যাবে না। ক্যারিবিয়ান বোলারদের ওয়াইড-নো দেওয়া আর সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যাটের কানা থেকে পাওয়া কিছু রানে প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ২ উইকেটে ৪৮। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা শুরু! আগের ৪ ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল যথাক্রমে ৩৭, ১৯, ৩৮ ও ২১।
সকাল ৯টায় শুরু ম্যাচে প্রথম ১০ ওভার নিয়েই ছিল শঙ্কা। কিন্তু সে সময়টা মোটামুটি উতরে গিয়েও বাংলাদেশ গড়বড় করে পরে। একের পর এক ব্যাটসম্যান ফেরেন বাজে শটে। অফ-মিডলে থাকা বল ফ্লিক করতে গিয়ে আউট হন দলের সেরা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত (১১)।
জয়রাজ শেখ হতাশ করেছেন আরও একবার। ইনিংসের শুরুতে বেশ কবার বেঁচে গেছেন আউট হতে হতেও। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি, আরও একবার থিতু হয়েও ছুঁড়ে এসেছেন উইকেট। মিডিয়াম পেসার শামার স্প্রিঙ্গারের অফ স্টাম্পের বাইরে নিরীহ এক ডেলিভারি দৃষ্টিকটু শটে টেনে আনেন স্টাম্পে (৩৫)।
কেয়ার্টার-ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে অসাধারণ জুটিতে জয়ের দুই নায়ক জাকির হাসান ও মিরাজ আবারও ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু হঠাৎই মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন জাকির। হোল্ডারকে ক্রস ব্যাটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হারান স্টাম্প (২৪)।
এরপরই মিরাজ-সাইফুদ্দিনের সময়োপযোগী জুটি। প্রথম ৩০ ওভারে স্পিন আনেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোলিং করান প্রথম চার পেসারকেই। আরেক পেসার কিমো পল ফিল্ডিংয়ে চোট পেয়ে ওই সময় বোলিং করতে না পারায় বিপাকে পড়েন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। স্পিন আক্রমণে আসায় স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান।
থিতু হওয়ার পর পেসারদের বিপক্ষেও দারুণ খেলেছেন দুজন। সিঙ্গেল-ডাবলস নেওয়ার ফাঁকে বাজে বলকে দিয়েছেন প্রাপ্য সাজা। চোট কাটিয়ে বল হাতে নিয়েই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থমকে দেন কিমো পল। ৪৬তম ওভারে পরপর দু বলে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়ে দেন এই মিডিয়াম পেসার।
টুর্নামেন্টে তুতীয় অর্ধশতকের পর শর্ট বল আকাশে উড়িয়ে ধরা পড়েন মিরাজ। পরের বলেই ডাউন দা উইকেটে খেলে লাইন মিস করে বোল্ড সাইফুদ্দিন (৩৬)। পরের ওভারে পল ফিরিয়ে দেন সাইদ সরকারকেও (২)।
টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাব্বেক হোসেন করেন ১২ বলে ১৪। শেষ ওভারে মেহেদি হাসান রানার (১০*) ছক্কায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায় ২২০।
বাংলাদেশের বোলিং শক্তি বিবেচনায় যে রানটি শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে জয়ের মত রান।

অন্যরকম