Fri. Aug 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16kখোলা বাজার২৪ বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: এটিএম বুথে জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার বিদেশি এবং তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। “তাদের কাছে এত তথ্য পেয়েছি যে এমন সব তথ্য আমরাও জানতাম না,” বলেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
কী পরিমাণ টাকা এই চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে- সাংবাদিকরা জানতে তিনি বলেন, “পিওতর (পিওতর সেজেফান মাজুরেক) একটা পর্যায় পর্যন্ত টাকার হিসেব বলতে পেরেছে কয়েক কোটি টাকা। এরপর আর হিসাব নাই তার কাছে।”
গ্রাহকের অগোচরে তিনটি ব্যাংকের এটিএম থেকে সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠলে বুথের সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে ইউক্রেনিয়ান পিওতরকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে এই চক্রে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সিটি ব্যাংকের আইটি শাখার তিন কর্মকর্তা রেজাউল করিম শাহীন, রেফাত আবেদিন রনি ও মোকসেদ আল মাকসুদকে।
গত রোববার গ্রেপ্তারের পর তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলা দিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদের ছয় দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের চতুর্থ দিনে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে নিজের কার্যালয়ে আলোচিত এই ঘটনায় সাংবাদিকদের নানা কৌতূহল মেটান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।
তিনি বলেন, “পিওতর ও বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য যেটি আমাদের সরবরাহ করেছে, তাতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কতিপয় আবাসিক হোটেল, কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সির নাম বেরিয়ে এসেছে। “তাদের মাধ্যমে জালিয়াতিগুলো হয়েছে। এটিএম বুথে যে জালিয়াতি হয়েছে, এটি খুবই ক্ষুদ্রাংশ এবং খণ্ডিত অংশ।” এটিএমের বাইরে ব্যাংকিং চ্যানেল ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে এই চক্রটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান মনিরুল।
আর কীভাবে তারা প্রতারণা করত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাদের কিছু ‘পজ’ মেশিন আছে। সে মেশিন যেখানো বসানো আছে। অর্থাৎ সেখানকার লোক, ব্যাংকের প্রতারক কর্মকর্তা ও চক্রটি। এই তিন চক্র মিলেই কাজটি সম্পন্ন হয়।”
‘কৌশলগত’ কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
“অনেক গোপন তথ্য পেয়েছি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে, যা আমাদের (পুলিশ) আগে জানা ছিল না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব আমরা। তাদের (ব্যাংক) অজান্তেই অনেক প্রতারণা হয়ে থাকে। এই প্রতারণার পদ্ধতি বন্ধ করার পরই কৌশলগুলো বলব।”
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পিওতর একজন হ্যাকার এবং সে টেকনোলজি খুবই ভাল জানে।
জালিয়াতির অর্থ বিদেশে পাচারের জন্য কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল ও ট্রাভেল এজেন্সিকে ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন পিওতর, যিনি অস্ট্রিয়ার একটি ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন দুই বছর আগে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নামি-দামি বা বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নয় বলে জানান মনিরুল। তারা কারা জানতে চাইলে তদন্তের পর্যায়ে কারও নাম জানাতে রাজি হননি তিনি।
মনিরুল বলেন, এই চক্রের সঙ্গে এক-দুজন প্রবাসী বাঙালি রয়েছেন। তারা লন্ডন প্রবাসী। এছাড়া রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইউক্রেইন এবং ইতালির কয়েকজন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে। “এদেশে সবাই আসেনি। পিওতরই ছিল এখানে এ চক্রের প্রধান। তাকে সহযোগিতা করতে এসেছিল দুজন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই তারা ঢাকা ত্যাগ করেছে।”
ওই দুজনের বিষয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। পিওতর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তিন/চারটি দেশে তার নামে হুলিয়া আছে।
ইংল্যান্ডের বসবাসরত বাংলাদেশি ফরিদ নাবির কাছে অর্থ পাঠানো হত বলে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মনিরুল বলেন, “পুলিশ অনেক বেশি তথ্য পেয়েছে। তা যাচাই-বাছাই করছি।”
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লন্ডন প্রবাসী সিলেটী ফরিদ নাবিরের মাধ্যমেই ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন পিওতর। ফরিদ নাবিরের মাধ্যমেই সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

অন্যরকম