খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : শ্রীলঙ্কাকে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রইলো বাংলাদেশ।
ধূসর শুরুতে রঙ চড়াল সাব্বির রহমানের অসাধারণ ইনিংস। সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ইনিংসের শেষটা হলো উজ্জ্বল। দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ম্যাচের শেষ হলো রঙিন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা করতে পারে ৮ উইকেটে ১২৪।
ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু করলেও টানা দ্বিতীয় জয়ে মাশরাফিরা টিকিয়ে রাখল ফাইনালের সম্ভাবনা।
ফিরেই আঘাত হেনেছেন আল আমিন হোসেন। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে পয়েন্টে সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় প্রচেষ্টার ক্যাচে পরিণত হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (২০ বলে ১২)।
শ্রীলঙ্কার ওপর চাপ আরও বাড়ালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিখুঁত লাইন-লেংথে বল করে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তার বলে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনে (৪ বলে ৩)।
তাসকিন আহমেদের কঠিন ক্যাচ মিসের বড় দাম দিতে হল না বাংলাদেশের। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে থিসারা পেরেরাকে (৬ বলে ৪) এলবিডব্লিউ করেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে দুই রানে তাসকিনের হাতে জীবন পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার।
তাসকিন আহমেদের বলে শূন্য রানে জীবন পেয়েছিলেন দিনেশ চান্দিমাল (৩৭ বলে ৩৭)। সেই তাসকিনই চমৎকার এক ক্যাচে ফিরিয়েছেন বিপজ্জনক হয়ে উঠা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে। মাহমুদউল্লাহকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে চান্দিমালের বিদায়ে ভেঙেছে ৫৬ রানের জুটি।
মাহমুদউল্লাহর পর আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে স্টাম্পড হয়ে ফিরে গেছেন শিহান জয়াসুরিয়া (২২ বলে ২৬)।
অসাধারণ এক ক্যাচে আগের ব্যর্থতা ‘পুষিয়ে’ দিলেন সৌম্য সরকার। স্লিপে দিনেশ চান্দিমালকে শূন্য রানে জীবন দেওয়া এই তরুণ তালুবন্দি করেছেন তিলকারতেœ দিলশানের (৯ বলে ১২ রান) দুরূহ এক ক্যাচ। সাকিব আল হাসানের বলে উঠিয়ে মেরেছিলেন দিলশান। মিডঅফ অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে বল লুফে নেন সৌম্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভারে ক্যাচ ছেড়েছিলেন সৌম্য সরকার। তার পুনরাবৃত্তি হল শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও। এবার শূন্য রানে দিনেশ চান্দিমালকে জীবন দিয়েছেন সৌম্য।
লাসিথ মালিঙ্গা বিহীন লঙ্কান বোলিংয়েও ধুঁকল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তবে অসাধারণ এক ইনিংসে দলকে প্রায় একাই টেনে নিলেন সাব্বির রহমান। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ আবারও খেললেন ছোটো কিন্তু দারুণ এক ইনিংস।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৭ রান তোলে বাংলাদেশ।
লাসিথ মালিঙ্গা বিহীন লঙ্কান বোলিংয়েও ধুঁকে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তবে অসাধারণ এক ইনিংসে দলকে প্রায় একাই টানেন সাব্বির রহমান। তিনে নেমে ৮০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ আবারও খেলেন ছোটো কিন্তু দারুণ এক ইনিংস।
চোট নিয়ে বিশ্রামে যাওয়া মালিঙ্গার জায়গায় লঙ্কানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। নতুন বলে বাংলাদেশকে ভোগালেন তিনিই।
বাংলাদেশের দুই ওপেনারই আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগে। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার মোহাম্মদ মিঠুন এবার ফিরে যান সবার আগে। ম্যাথিউসের ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারেননি মিঠুন, লাইনে না খেলে এলবিডব্লিউ (০)।
দু:সময়ের প্রহরকে দীর্ঘায়িত করে সৌম্য সরকার ফেরেন নুয়ান কুলাসেকেরার বলে দৃষ্টিকটু এক শটে (৪)।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বারবাডোজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান করতে পারেননি ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৬। রান খরা দূর হয় সাব্বিরের ব্যাটে, তৃতীয় ওভারে কুলাসেকেরাকে তিনটি চার ও এক ছক্কায় নেন ১৮ রান।
কিন্তু একটু গুছিয়ে আসার আগেই আরেকটি আঘাত, সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট মুশফিকুর রহিম (৪)।
নিয়মিত উইকেট হারানোতেও ভড়কে না গিয়ে সাব্বির এক প্রান্তে খেলে গেছেন অসাধারণ সব শট। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশে তোলে ৪১ রান, তাতে সাব্বিরই ১৯ বলে করেন ৩৫। বাকিরা মিলে ১৭ বলে ৬!
পাওয়ার প্লে পর একটু স্লথ হয়েছিল রানের গতি। নবম থেকে দ্বাদশ, এই চার ওভার আসেনি বাউন্ডারি। সাব্বিরের ব্যাটেই আবার প্রাণ পায় ইনিংস। ব্যাটিং ফর্ম খোঁজার লড়াইয়ে থাকা সাকিব দিয়ে যান সঙ্গ।
ভাগ্যকেও খানিকটা পাশে পান সাব্বির। শিহান জয়াসুরিয়াকে স্লগ করে বল পাঠিয়েছিলেন মিড উইকেট সীমানায়, অভিজ্ঞ চামারা কাপুগেদারা হাত ছ্ুঁইয়ে বল পাঠিয়ে দেন ওপারে! ওই ছক্কাতেই অর্ধশতক স্পর্শ করেন সাব্বির, ৩৮ বলে। টি-টোয়েন্টিতে এটি তার তৃতীয় ফিফটি।
বেঁচে গিয়ে পরের দুই বলেই আরও দুটি বাউন্ডারিতে লঙ্কানদের পোড়ান সাব্বির। দুশমন্থ চামিরাকে দারুণ এক পুলে উড়িয়ে দেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। পরের বলে একই জায়গা দিয়ে আবার ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়লেন সীমানায়। দলের রান তখন ১০৮, সাব্বিরের একারই ৮০! ৫৪ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা।
সাব্বিরের বিদায়ের পর দারুণ দুটি চারে ডানা মেলার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। পারলেন না ধৈর্য্যশীল ইনিংসটা দারুণ ভাবে শেষ করতে। ফিরলেন চামিরার বাউন্সারে (৩৪ বলে ৩২)।
বাংলাদেশের শেষটা তবু খারাপ হয়নি, মাহমুদউল্লাহ যে ছিলেন। আগের ম্যাচের মতোই জ্বলে ওঠেন তিনি শেষ দিকে, ১২ বলে অপরাজিত থাকেন ২৩ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৭/৭ (মিঠুন ০, সৌম্য ০, সাব্বির ৮০, মুশফিক ৪, সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৩*, নুরুল ২, মাশরাফি ২; চামিরা ৩/৩০, ম্যাথিউস ১/৮, কুলাসেকারা ১/৪৪)
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৮ (চান্দিমাল ৩৭, দিলশান ১২, জয়াসুরিয়া ২৬, ম্যাথিউস ১২, থিসারা ৪, সিরিবর্ধনা ৩, শানাকা ১৪, কাপুগেদারা ১২*, কুলাসেকারা ০, চামিরা ১*; আল আমিন ৩/৩৪, সাকিব ২/২১, মাহমুদউল্লাহ ১/১৪, মাশরাফি ১/১৭, মুস্তাফিজ ১/১৮)