Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

20kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো একা দায়ী নন। এর পেছনে বড় কয়েকজনের হাত আছে। এসব রাঘববোয়াল ফিলিপাইনেরই নাগরিক। এ কথা বলেছেন সে দেশের তদন্তকারী সিনেট কমিটি ব্লু রিবনের সভাপতি তোয়েফিস্তো গুংগোনা।
ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে গত বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) কর্মকর্তা মায়া দেগুইতো। রুদ্ধদ্বার ওই শুনানির পর ব্লু রিবন কমিটির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কীভাবে অর্থ চুরি গেল, তা জানতে আরসিবিসির আরও কর্মকর্তাকে ডাকতে হবে।
ফিলিপাইনের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইন্টারআকসিয়োনডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তোয়েফিস্তো গুংগোনা বলেন, শুনানিতে দেগুইতোর দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, তিনি একা এ ঘটনায় জড়িত নন। এর পেছনে বড় বড় মানুষ জড়িত আছেন।
দেগুইতো আরসিবিসির জুপিটার মাকাতি শাখার ব্যবস্থাপক। এই অর্থ চুরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেবল তাঁর নামটিই এসেছে। চুরি যাওয়া অর্থ আরসিবিসির এই শাখা হয়ে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে ঢুকেছে।
অর্থ চুরির পেছনে ওই ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাত আছে—গুংগোনাকে তাঁর এই কথা পরিষ্কার করে বলতে অনুরোধ করা হয়। জবাবে সিনেটর গুংগোনা বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আছে। তবে এখনই তা বলা ঠিক হবে না। কেননা, আমাদের হাতে এমন অকাট্য প্রমাণ নেই।’
বৃহস্পতিবারের শুনানির পর ফিলিপাইনের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্য টেরি রিডন চুরি যাওয়া অর্থ নিয়ে কংগ্রেসের সমান্তরাল একটি তদন্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকারি নানা সংস্থা, ওই ব্যাংকের নির্বাহীরা এবং ক্যাসিনোর কর্তৃপক্ষ এক জোট হয়ে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফাঁসিয়েছে কি না, তা জানতে তদন্ত হওয়া দরকার।
বিবৃতিতে রিডন বলেন, পুরো ঘটনার পেছনে উচ্চপর্যায়ের লোকজনের হাত আছে। ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজও এমনটাই মনে করেন।
সিনেট কমিটির শুনানিতে জন গোমেজ বলেন, ‘একজন বহিরাগত হিসেবে আমি মনে করি, কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। দেখুন, যখন সিনেটররা আরসিবিসি কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক কিছু প্রশ্ন করছিলেন, মি. লরেঞ্জো ট্যানও (আরসিবিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দও বের করা যায়নি।’
জন গোমেজ বলেন, ‘আমি মনে করি না, হঠাৎ করে কোনো অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি ডলার লেনদেন হলে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের একটি শাখার ব্যবস্থাপক তা একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এখন তাঁরা বলছেন, ওই সব অ্যাকাউন্ট ছিল ভুয়া। আমার মনে হয় না, বিশ্বের কোথাও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রেসিডেন্ট কোনো শাখা ব্যবস্থাপককে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের অনুমতি দেবেন।’
টেরি রিডন বলেন, আরসিবিসি ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে, তা তাঁর নয় বলে সরাসরি বলে দিয়েছেন ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্টটি খোলার এবং তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তাঁর সংশ্লিষ্টতার যে ধারণা আছে, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
রিডন বলেন, ‘আমার মনে হয়, উইলিয়াম গো এবং প্রত্যেকেই সব দোষ ঠেলে দিচ্ছেন দেগুইতোর দিকে। আসলে দেগুইতো এই লেনদেনের বিষয়ে শুধু তাঁর ব্যাংকের নির্বাহী এবং তাঁর গ্রাহকের নির্দেশ পালন করেছেন।’
সিনেটর তোয়েফিস্তো গুংগোনা সাক্ষাৎকারে বলেন, আরসিবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক দেগুইতো তাঁকে বলেছেন, যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা গেছে, তা খুলতে কিম ওং যেসব নাম দিয়েছিলেন, সেগুলো কল্পিত নাম ছিল। নামগুলো হলো মাইকেল ক্রুজ, জেসি লাগরোসাস, আলফ্রেড ভারগারা ও এনরিকো ভ্যাসকুয়েজ।
এই চারজন এবং দেগুইতোর বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগে টাকা পাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে দেগুইতো বলেছিলেন, কিম ওং আরসিবিসির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী লরেঞ্জো ট্যানের বন্ধু। তবে ট্যান এ কথা অস্বীকার করেছেন।
গুংগোনা তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, শুনানিতে ব্যাংকের দুই ‘জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর’ নাম উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এই অর্থ পাচারের বিষয়ে দেগুইতো ফিলিপাইনের একটি চক্রের কথা উল্লেখ করেছেন।
গুংগোনা বলেন, ‘দেগুইতোর সাক্ষ্য থেকে আমরা যতটা জানতে পেরেছি তা হলো, তাঁকে শুধু ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে একজন বড় কেউ আছেন। তবে অন্য আরও লোকজনের সাক্ষ্য আমাদের শুনতে হবে।’
পাঁচজনকে তলব: ফিলিপাইনের বিচার মন্ত্রণালয় মায়া সান্তোস দেহুইতোসহ পাঁচজনকে তলব করেছে। অর্থ পাচারের ঘটনায় দেশটির মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক কাউন্সিলের করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল শুক্রবার তাঁদের তলব করা হয়।
দেগুইতো ছাড়া বাকি চারজন হলেন মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস, আলফ্রেড সান্তোস ভার্গারা এবং এনরিকো থিয়োডরো ভাসকুয়েজ।