খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০১৬ : মোহালিতে বিরাট-কীর্তি। আর তাতেই মেতে আছে এখন পুরো ক্রিকেট-বিশ্ব। সতীর্থরা মুগ্ধ, মুগ্ধ সাবেক তারকারা। এমনকি যে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে বিরাট কোহলি ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিয়ে গেছেন, সেই অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের কাছ থেকেও আসছে একের পর এক অভিনন্দন-বার্তা আর প্রশংসাবাণী।
রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ১৬০ তাড়া করতে নেমে যুবরাজ সিং যখন আউট হলেন, ৬ ওভারে ভারতের আরও দরকার ৬৭ রান। মোহালির শ্লথ হয়ে আসা উইকেটে সেটা কঠিন বললেও কম বলা হয়। সেখান থেকে কোহলি-ধোনি ৫ বল বাকি থাকতেই খেলা শেষ করে দিলেন। ওই ৬৭ রানে ধোনির অবদান মাত্র ১৮। কোহলি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৫১ বলে ৮২ রান করে। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ১৫তম হাফ সেঞ্চুরি, ১০টিই তাড়া করতে নেমে! অবিশ্বাস্য! দুর্দান্ত এই ইনিংসটা দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দেড় হাজার রান হলো কোহলির। এর জন্য তাঁকে খেলতে হয়েছে ৩৯টি ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চেয়ে কম ইনিংসে দেড় হাজার রান আর কেউ করতে পারেননি। দেড় হাজার রান করতে গেইলের লেগেছে ৪৪ ইনিংস।
দুর্র্ধষ এই ইনিংসটি দেখার পর সৌরভ গাঙ্গুলী এতটাই মুগ্ধ যে বলেই ফেললেন, ‘রান তাড়া করায় এখন পর্যন্ত কোহলিই সবার সেরা। আমি কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের মতো ব্যাটসম্যানকে মাথায় রেখেই এ কথা বলছি। শচীন স্পেশাল একজন ছিল। কিন্তু যদি আপনি শুধু রান তাড়া করার কথা ভাবেন, কোহলি এরই মধ্যে টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে গেছে।’
একটা সময় ম্যাচ ভারতের নাগাল থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল প্রায়। ওভারপ্রতি ১৩ রানের মতো করে রান দরকার ছিল। কিন্তু সৌরভ জানালেন, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, তিনি জানতেন কোহলি ঠিকই ম্যাচ বের করে দেবেন।
সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও রীতিমতো আচ্ছন্ন, ‘অবিশ্বাস্য একজন ব্যাটসম্যান সে। আর কিছু বলার দরকার নেই।’ যাঁর সঙ্গে কোহলির তুলনা বিভিন্ন সময়েই আসে, সেই টেন্ডুলকারও টুইট করেছেন, ‘ওয়াও কোহলি! স্পেশাল একটা ইনিংসটা ছিল এটা। দারুণ একটা জয়!’ সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার তো বলেই দিয়েছেন, ‘সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান, এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।’ পরশুর ইনিংসটা কতটা উপভোগ করেছেন, তা বোঝাতে গিয়ে গাভাস্কার মজা করে বলেছেন, ‘আমার মাথায় যে অল্প কয়টা চুল বাকি আছে, সেগুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওর অসাধারণ ব্যাটিং দেখে। অবিশ্বাস্য!’
শেন ওয়াটসন খুব কাছ থেকেই দেখেছেন কোহলির কীর্তিটা, কাল তো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ ম্যাচই ছিল এই অলরাউন্ডারের। কোহলিকে নিয়ে মুগ্ধ তিনিও, ‘এ রকম ইনিংস দেখতে পারাটা দারুণ আনন্দের। অবিশ্বাস্য! রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে আমরা একসঙ্গে খেলব, আর তর সইছে না আমার।’ কোহলি-কীর্তির আরেক সাক্ষী গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও টুইট করেছেন, ‘অসাধারণ একটা ইনিংস। আর কিছু বলার নেই। একজনের কাছেই আমরা হেরে গেলাম।’ মাইকেল ভন, স্কট স্টাইরিসদের মতো সাবেক থেকে শুরু করে এই সময়ের ডোয়াইন ব্রাভো, ড্যারেন স্যামি, রস টেলররাও কোহলি-বন্দনায় মুখর।
তাই বলে হ্যারি কেনও? টটেনহামের ইংলিশ স্ট্রাইকার টুইট করেছেন, ‘বিরাট কোহলি অসাধারণ খেলোয়াড়। চাপের সময় সে যেভাবে নিজের সেরাটা বের করে আনে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে সে কোন মানের।’ ক্রিকেট-ভক্ত লিভারপুলের সাবেক মিডফিল্ডার ডিডি হামান পুরো ম্যাচটি দেখতে পারেননি বলে একটু দুঃখিত, ‘আমি কি সর্বকালের ধ্রুপদি ইনিংসগুলোর একটি মিস করে ফেললাম?’ এএফপি, রয়টার্স।