খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬: বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬ উপলক্ষে জাতিসংঘে ১ এপ্রিল দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক পরামর্শক কমিটির চেয়ারপার্সন এবং বিশিষ্ট স্কুল মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন জাতিসংঘের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কর্মব্যস্ত সময় কাটাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ডব্লিউএইচও এক্সপার্ট অ্যাডভাইসরি প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন সকালে দিবসটি উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং বৈষম্য হ্রাস (এসডিজি১০) শীর্ষক আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, কম্যুনিকেশন ও পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল খ্রিস্টিনা গালাচ, সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মগেন লিকেটফট, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাহীরা উপস্থিত থাকবেন।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় একথা বলা হয়।
আলোচনা সভায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা; টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সকলের কর্মের নিশ্চয়তা বিধান (এসডিজি ৮); অবারিত প্রবেশাধিকার (এসডিজি ১১); এবং পরিবর্তনের লক্ষ্যে পার্টনারশীপ (এসডিজি ১৭) এ চারটি বিষয়ও আলোচিত হবে।
এ আলোচনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, অটিজম ও অন্যান্য ডেভলপমেন্ট ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী ও তাদের পরিবারের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অত্যন্ত কার্যকর কৌশল ও পদ্ধতি চিহ্নিত করা এবং এগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে এসডিজি’র লক্ষ্য পূরণ সার্বজনীন করা।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বিকেলে ‘অটিজম মোকাবেলা : এসডিজি’র আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক এক উঁচু পর্যায়ের ইভেন্টে যোগ দেবেন। এখানে তিনি মূল বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। বাংলাদেশ, ভারত, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এবং অটিজম স্পিকস যৌথভাবে এ ইভেন্টের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে মিসেস বান কি-মুন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
সকালের অনুষ্ঠান শুরু হবে নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় ও বিকেলের ইভেন্ট শুরু হবে নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৩টায়। উভয় অনুষ্ঠানই জাতিসংঘের ইউএন ওয়েব টিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে। অনুষ্ঠানগুলোর ওয়েবকাস্ট অনলাইনে লাইভ পাওয়া যাবে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘের এ অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হন। বিশ্বব্যাপী অটিজম সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদানের জন্য তিনি সকলের প্রশংসা অর্জন করেন।
অটিজম বিষয়ে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অবদানের জন্য ডব্লিউএইচও ২০১৪ সালে তাকে ‘এক্সসেলেন্স এ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে।
প্রতিটি দেশের নীতিতে অটিজম অন্তর্ভুক্তিকরণ, অটিস্টিক শিশুদের প্রতি তার অঙ্গীকার এবং জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকান্ডে অটিজমকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ডব্লিউএইচও তাকে এ পুরস্কার প্রদান করে।
তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা উদ্বুদ্ধকরণ কর্মকান্ড শুরু করেন। ফলে শিশুর জন্মের দুই বছরের মধ্যে অটিজম সনাক্তকরণ এবং অটিস্টিক শিশু ও তাদের পরিবারকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দেশে একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিজম আক্রান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিস্টিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরই অটিস্টিকসহ মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে মূল ¯্রােতে এনে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যাপক উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেন।
এলক্ষ্যে সরকার অটিজম সচেতনতা, সামজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ, তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালনার লক্ষ্যে পাঁচ-বছর মেয়াদি একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে। মানসিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারের এসব উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের তদারকি করছে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন দক্ষিণ এশীয় অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ারও মূল উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।