Sun. Mar 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

11 খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬: প্রায় ৪ মাস ধরে অ্যান্টিভাইরাস নেই। ছিল না কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এ ধরনের তথ্য-ই বেরিয়ে আসছে তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসায়।
ইতোমধ্যে কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক, উপ-মহাব্যবস্থাপক, যুগ্ম পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসার তালিকায় রয়েছেন কিছু নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নর।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু কর্মকর্তার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এতে প্রায় চার মাস আগে অ্যান্টিভাইরাস প্রত্যাহারের বিষয়টি উঠে আসে। কিন্তু কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে তার সদুত্তর মিলছে না।
তবে একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক লেভেলের কর্মকর্তার জবানবন্দির বরাত দিয়ে তদন্ত কমিটির ওই সূত্র জানায়, আরটিজিএস প্রক্রিয়ায় লেনদেনের পদ্ধতিকে দোষারোপ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যখন থেকে আরটিজিএস সফটওয়্যার চালু করা হয় তখন দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের সফটওয়্যারের অ্যান্টিভাইরাসটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সহজে হ্যাকিং করা গেছে বলে ওই সূত্রের দাবি।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনে তিনটি সার্ভার কাজ করে। ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয় প্রোডাকশন সার্ভার দিয়ে। বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত থাকে ব্যাক সার্ভার। তৃতীয় সার্ভারের নাম টেস্ট সাভার। এটির কাজ সম্পর্কে জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সার্ভারে লেনদেন হয়ে আসছে এতদিন। এতে একটি অ্যান্টিভাইরাসও ইনস্টল ছিল। কিন্তু আরটিজিএস চালুর মাধ্যমে ওই অ্যান্টিভাইরাসটি ডিসঅ্যাবল (অকার্যকর) করা হয়। বিষয়টি সরাসরি পেমেন্ট সিস্টেম ও আইটি বিভাগ জানে। কারণ নতুন সফটওয়্যার ইনস্টলে এই দুই বিভাগের সম্পৃক্ততাই বেশি।
ব্যাংকিংয়ে নতুন সংযোজন রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) চালু করা হয় ২০১৫ সালের ২৯শে অক্টোবর। এর আগে ১৯শে অক্টোবর এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে স্বাক্ষর করা পেমেন্ট সিস্টেমের মহাব্যবস্থাপক কে এম আবদুল ওয়াদুদ বর্তমানে ব্যাংকিং পেশার বাইরে রয়েছেন। চাকরির বয়স প্রায় ২ বছর থাকতেই তিনি ইস্তফা দিয়ে আমেরিকা চলে যান।
যেসব গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিং করেন তারা এক লাখ বা তার বেশি অঙ্কের টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করতে আরটিজিএস পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। আরটিজিএস পদ্ধতির মাধ্যমে একটি পেমেন্ট অর্ডারে সর্বোচ্চ ১৯০ কোটি টাকা স্থানান্তর ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাহকের পক্ষে ব্যাংক থেকে পেমেন্ট অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা স্থানান্তর হয়ে যাচ্ছে অন্য ব্যাংকের হিসাবে। দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি ৫টি বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে আরটিজিএসে। এর আগে বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউসের (বিএসিএইচ-ব্যাচ) আওতায় এক লাখ বা তার বেশি অঙ্কের টাকার চেকের আন্তঃব্যাংক লেনদেন হতে কমপক্ষে একদিন সময় লাগতো। ক্লিয়ারিং হাউসে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের চেক সকালে জমা দিলে ওই চেকের অর্থ জমাকারী ব্যাংকের হিসাবে আসতে বিকাল হয়ে যেত। আর বিকালে জমা দিলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত লেগে যেত। কিন্তু আরটিজিএস ব্যবস্থায় তা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গেই।
যেভাবে সম্পন্ন হয় আরটিজিএস
কোনো একটি ব্যাংকের গ্রাহক তার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগে জানাবে যে, তার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য একটি ব্যাংকের কোন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠাতে হবে। ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগ ওই পেমেন্ট অর্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএসে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই সে অ্যাকাউন্টে ওই পরিমাণ টাকা জমা হয়ে যাবে।