Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী ১৩ এপ্রিল এ বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বসবে। দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে, আরও চার ধাপের ভোট রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার পাশাপাশি নির্দশনামূলক বৈঠক হবে এটি।”
স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর বাংলাদেশের ৪ হাজার ২৭৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। গত ১১ ফেব্র“য়ারি তফসিল ঘোষণার পর গোলযোগ-সহিংসতায় অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে দল, প্রার্থীসহ নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসি।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটের পর ‘অসন্তুষ্ট’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, কয়েকটি ঘটনা ‘সামগ্রিক অর্জনকে ম্লান’ করেছে। দুষ্কৃতকারীরা ‘কৌশল পাল্টেছে’।
গত ২২ মার্চ ও ৩১ মার্চ প্রথম দুই ধাপের ইউপি ভোট হয়। আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের পর ৪ জুনের মধ্যে আরও তিন ধাপের ভোট রয়েছে।
ইউপি ভোট সামনে রেখে গত ৩ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথম দফা বৈঠক করে ইসি। বৈঠকে অনিয়ম প্রতিরোধে ‘শেষ বুলেট’ পর্যন্ত লড়ার নির্দেশও দেন সিইসি।
নির্বাচনে অন্তত ২১টি দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই ধাপের ভোটকে সুষ্ঠু বললেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায় ইসির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিএনপি বরাবরই ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোট বর্জনের হুমকিও দিয়েছে। অবশ্য সোমবার তারা ভোটের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
প্রধান দুই দলসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় ‘নড়েচড়ে’ বসা ইসি রোববার ও সোমবার নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করেছে পরবর্তী করণীয় নিয়ে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “দলীয় এ নির্বাচনে দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। ঢালাও সমালোচনা না করে দলীয় কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি সহিষ্ণু মনোভাব দেখিয়ে ইসিকে সহযোগিতা করতে হবে।”
সুষ্ঠু ভোটে জন্য প্রার্থী, ভোটারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতাও চান তিনি।
“আমরা কঠোর হয়েছি দুই ধাপে। অনিয়ম বন্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছি। সামনের ধাপে আরও কঠোর হব। পরিস্থিতি সুন্দর রেখে ভালো নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেব,” বলেন এ নির্বাচন কমিশনার।
ভালো নির্বাচন করার বিষয়ে ইসির ‘উদ্যোগ’ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সচিব সিরাজুল বলেন, “ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইসির পদক্ষেপ
ইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই ধাপের ভোটে দায়িত্বে অবহেলার জন্য কেন্দ্র রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ জন এএসআইকে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগে ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। অনিয়মকারী ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ছয়জন ওসি ও একজন এসপিকে কমিশনে তলব করে সতর্ক করা হয়েছে। তিনজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চারজন ওসিকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বদলি করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের একজন জেলা নির্বাচন অফিসার ও একজন উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে বদলি করা হয়েছে।
আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ১৩০ জনকে মোট ৪১৭,৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ইসি বলছে, প্রথম ধাপের ৬৮৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ায় ৬৫টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়, যা মোট কেন্দ্রের মাত্র ০.৯৪%। দ্বিতীয় ধাপের ৬৮৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে বন্ধ করা হয় ৩৭টির; যা মোট কেন্দ্রের মাত্র .০৫০%।
এত দেখা যায় দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্র স্থগিতের সংখ্যা কমেছে। দুই ধাপেই কেন্দ্র বন্ধের হার খুবই নগণ্য- এক শতাংশরও কম; যা এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই দৃশ্যমান করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কিছু কিছু কেন্দ্রে এবং কোথাও কোথাও কেন্দ্রের বাইরেও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা হয়েছে। যেখানেই ভোট কারচুপি বা সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে, সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং যেখানে প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানে কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”