খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০১৬: অফশোর অর্থনৈতিক শিল্পে স্বচ্ছতার মান উন্নত করতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্যানেল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে পানামা সরকার।
মোস্যাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলার মাঝে এ দেন পানামার প্রেসিডেন্ট জুয়ান কারলোস ভ্যারেলা।
ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা গেছে, পানামা-ভিত্তিক ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকা কিভাবে তাদের মক্কেলদের অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং করফাঁকি দেয়ার পথ দেখিয়েছে।
এসব পথের সুযোগ নিয়ে বিশ্বের ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা কোন কৌশলে করফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, কালো টাকা সাদা করেছেন, তা জেনে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ফলে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। পানামার প্রেসিডেন্ট ভ্যারেলাও তদন্তে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আর্থিক সেবায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন তিনি।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে ভ্যারেলা বলেন, পানামা সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করবে । আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম যাচাই করা এবং স্বচ্ছতা আনার সুপারিশ করাই হবে এ কমিশনের কাজ।
মোসাক ফনসেকা অবশ্য দাবি করেছে গোপন নথি তাদের অফিস থেকে ফাঁস হয়নি। বিদেশ থেকে তাদের সার্ভার হ্যাক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পানামা এটর্নি জেলারেল অফিসে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
মোস্যাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথির সূত্রে ইতোমধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড ডেভিড গুনলাগসন পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তার প্রয়াত পিতা ইয়ান ক্যামেরন একটি অফশোর কোম্পানি খুলেছিলেন বলে ফাঁস হওয়ার পর, এর সঙ্গে তার ও তার পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে।
ক্যামরেন প্রথমে এসবকে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলে উড়িয়ে দেন, কিন্তু পরে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আর্থিক বিষয়ে তার গোপন করার মত কিছু নেই। ‘আর্থিক বিষয়ের কথা যদি বলেন, আমার কোন শেয়ার নেই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি একটা বেতন পাই, আমার কিছু সঞ্চয় আছে, যা থেকে কিছু সুদ পাই। আমার একটি বাড়ি আছে। আমরা এখন ডাউনিং স্ট্রীটে থাকি তাইটা ভাড়া দিয়েছি। আমার আর কিছু নেই, আমার কোন শেয়ার নেই, কোন অফশোর একাউন্ট নেই।’
কিন্তু মিস্টার ক্যামেরনের এই বিবৃতি সন্তুষ্ট করতে পারেনি অনেককে। এরপর তাই ডাউনিং স্ট্রীট থেকে আরও এক দফা বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতেও কোন অফশোর বিনিয়োগ থেকে তিনি বা তার পরিবার লাভবান হবেন না।
অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, চীনা নেতাদের আত্মীয়-স্বজন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকন্যারা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, ফুটবলার লিওনেল মেসি, বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই অন্যতম।
বেইজিং-এর সরকারি মুখপাত্র এসব অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলছেন, এসবের কোন সত্যতা নেই।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি শত কোটি ডলার পাচারের এক চক্রে জড়িত বলে দাবি করা হচ্ছে ফাঁস দলিলপত্রের ভিত্তিতে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন মুখপাত্র একে পশ্চিমা গণমাধ্যমের অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে কিভাবে ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীদের কর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা বন্ধ করা যায় তার নানা উপায় নিয়েও জোর বিতর্ক চলছে।
ব্রিটেনের অধীন যেসব ক্ষুদ্র অঞ্চল, এই করফাঁকি দেয়ার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে সেগুলোতে প্রত্যক্ষ শাসন জারির দাবি উঠেছে।
ফ্রান্স জানিয়েছে, করফাঁকির এই অভিযোগের পর তারা পানামাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে।