খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬ : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তৃতীয় ধাপ থেকে অভিভাবক পাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থীরা। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামতে তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক করে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে হাইকমান্ড। শুক্রবার সকাল থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো হয় এই চিঠি।
এছাড়া আজ শনিবারের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে বিভাগীয় টিম। যেসব বিভাগ আয়তনে বড় সেখানে দুটি টিম করা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের আহ্বায়ক করে এসব কমিটি করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এসব টিম দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামতে ঢাকা ছাড়ছেন। কেন্দ্রের নেয়া এসব পদক্ষেপে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তারা ক্ষমতাসীন দলের যে কোনো অনিয়ম ও প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সো”চার হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করতে পারবে বলে মনে করছে দলটির হাইকমান্ড। আগের দুই ধাপের নির্বাচনে অনেকটা অভিভাবকহীন ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ কেন্দ্রের কোনো নেতাই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। পাশাপাশি কেন্দ্রের থেকে ছিল না কোনো দিকনির্দেশনাও।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এবার তারা অভিভাবক পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা পাশে থাকলে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে ইউপি নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান শুক্রবার টেলিফোনে বলেন, জাতীয় কাউন্সিলে নেতারা ব্যস্ত থাকায় গত দুই দফায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্বিক সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করাতে সব ধরনের উদ্যোগই নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় মনিটরিং টিমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। নেতাদের সক্রিয় হতে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে পেলে প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকরা সাহস পাবেন বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
তবে ইসি, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের আচরণে সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোটারকে সো”চার হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
জানা গেছে, প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রথমে জেলা ও উপজেলা বা থানা নেতাদের বরাবর কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের নামেও চিঠি ইস্যু করা হয়। ইউপি নির্বাচনের সমন্বয়ক ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। নির্বাচন মনিটরিং টিমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত প্রায় বারোটার দিকে চিঠি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ডাকযোগে তা পাঠানো শুরু হয়েছে। ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্ট নেতার উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আপনি জানেন, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ভয়ভীতি ও হুমকিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থীর পাশে দাঁড়ালে তারা সাহস পাবেন। তাই আপনি দ্রুত এলাকায় গিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন বলে আশা করি।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণসংযোগকালে কোনো প্রতিবন্ধকতা ও বাধার মুখোমুখি হলে স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে চিঠির কোথাও এলাকায় না গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই। এ সম্পর্কে দলের এক নীতিনির্ধারক জানান, এসব ব্যাপারে চিঠির ভাষা সব সময় ইতিবাচকই হয়। এলাকায় না গেলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না এমনটা উল্লেখ না থাকা মানে তাকে ছাড় দেয়া নয়। হাইকমান্ডের নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবির মুরাদ শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে জানান, তিনি এখনও চিঠি হাতে পাননি। চিঠি পেলে অবশ্যই এলাকায় গিয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা প্রার্থীর পাশে দাঁড়ালে নির্বাচনে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাহস পাবে। কারণ প্রতিটি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও হুমকিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রশাসনের কাছে বলার পরও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করলেও তারা কিছুটা হলেও পদক্ষেপ নিতে পারেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলাপ করে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করেছেন। প্রতিটি বিভাগে একটি করে কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়। যেসব বিভাগ আয়তনে বড় সেখানে দুটি কমিটি করা হবে।
নির্বাচন মনিটরিং টিমের সদস্য ও কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় কমিটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। আজ শনিবারের মধ্যেই সব কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে বরিশাল বিভাগের নির্বাচন শেষ হওয়ায় সেখানে কোনো কমিটি করা হবে না। তিনি আরও জানান, তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে।
কমিটি কিভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে প্রিন্স বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে গণসংযোগে নামবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় কোনো নেতা নিষ্ক্রিয় আছেন কিনা কিংবা প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন কিনা তাও ওই কমিটি মনিটরিং করবে। পাশাপাশি যেসব ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তাদের সঙ্গে ওই কমিটির নেতাদের আলোচনা করে তাকে নির্বাচন থেকে সরে আসার অনুরোধ জানাবেন।
সূত্র জানায়, দলের পাশাপাশি জোটের নেতাকর্মীদেরও ভোটের মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। সম্প্রতি জোটের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেবেন।