খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬: কাশ্মীরে কেমন ঘোরাঘুরি করলি?’
দারুণ, বন্ধু! কাশ্মীরকে কেন ভূস্বর্গ বলা হয়, এবার গিয়ে বুঝলাম।’
নেটে ব্যাটিং করে একাডেমি মাঠের পূর্ব দিকের ছাউনিটায় বসেছেন দুজন। বাইরে প্রচণ্ড গরম। গরম হয়ে উঠেছে মাথার ওপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের বাতাসও। সেদিকে অবশ্য তাঁদের ভ্রুক্ষেপ নেই। মাশরাফি বিন মুর্তজা ও আবদুর রাজ্জাককে তখন পেয়ে বসেছে আড্ডার নেশা। চায়ে হালকা চুমুকে জমে গেল দুই বন্ধুর আলাপ।
কাশ্মীরে সপরিবারে ছুটি কাটিয়ে পরশু দেশে ফিরেছেন মাশরাফি। কাল যোগ দিয়েছেন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের অনুশীলনে। ‘প্লেয়ার ড্রাফট’ পদ্ধতির পরই শুনেছিলেন এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রাজ্জাক এবং তিনি খেলবেন এক দলে। ঢাকা লিগে আগে কখনো দুজন একই দলে খেলেছেন? স্মৃতি হাতড়ে মাশরাফির-রাজ্জাকের অভিন্ন উত্তর—‘না’!
‘২০০০ সালে প্রথম একসঙ্গে খেলেছিলাম, নাকি?’—রাজ্জাকের প্রশ্ন মাশরাফিকে। ‘আমরা প্রথম খেলেছিলাম আজাদ স্পোর্টিংয়ের হয়ে। তবে সেটা ছিল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট। ওই শেষ। এর পর অবশ্য জাতীয় দলে খেলেছি। তবেৃ’ মাশরাফি থেমে যান। তবে কী? দুজনের মুখেই হাসি খেলে গেল, ‘তবে ঢাকা লিগে এই প্রথম!’
মাশরাফি-রাজ্জাকের বন্ধুত্বের বয়স প্রায় ১৬ বছর। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই দুজনের পরিচয়। এর পর বহমান নদীর মতো এঁকেবেঁকে চলা ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কত উত্থান-পতনের সাক্ষী তাঁরা। একসঙ্গে খেলেছেন ১২৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে ৫টি টেস্ট, ৯৯ ওয়ানডে এবং ২৩ টি-টোয়েন্টি। এক জীবনে সঞ্চিত হয়েছে বহু অভিজ্ঞতা। কিন্তু ক্যারিয়ারের এই সাঁঝবেলায় এমন নতুন অভিজ্ঞতা হবে, তা কি ভেবেছিলেন?
এবার ‘প্লেয়ার ড্রাফট’ পদ্ধতি দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে এক বিন্দুতে। এবার না হয় ‘প্লেয়ার ড্রাফট’-এ একই ক্লাব পেয়েছেন। যখন স্বাধীনভাবে ক্লাব বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল, তখন কেন খেলা হয়নি একসঙ্গে? রাজ্জাকের যুক্তি, ‘তখন তো আমরা দুজনই পুলের খেলোয়াড় ছিলাম। পুল থেকে কোনো দলই দুজন বোলারকে নিতে চাইত না। নইলে হয়তো খেলা হতো।’ চায়ে ছোট্ট চুমুক দিয়ে মাশরাফি মাথা নেড়ে সম্মতি জানান বন্ধুর কথায়।
অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ দলের বাইরে রাজ্জাক। দুজন একসঙ্গে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে দলে রাজ্জাকের প্রয়োজনীয়তা কতটা, ইদানীং সেটি ভালোই বোঝা যাচ্ছে। তবে তাঁর জন্য জাতীয় দলের দরজাটা খোলেনি, খুলবে কি না কে জানে! বন্ধু বলে নন, মাশরাফির কাছে রাজ্জাক এখনো গুরুত্বপূর্ণ বোলার, ‘বন্ধু তো বন্ধুই। এর সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। তার পরও বলব, আমার কাছে ও সব সময়ই অন্য রকম। একে অন্যের সঙ্গ উপভোগ করি। দেড় বছর ধরে সে দলের সঙ্গে নেই। ওকে মিস করব, সেটাই স্বাভাবিক।’
নিজেদের মধ্যে এই রসায়ন নিঃসন্দেহে মাঠে বেশ কাজে লাগে। তবে রাজ্জাক মনে করেন, ‘মাঠের বাইরের বিষয় আলাদা। যখন ও অধিনায়ক থাকবে, বা আমি থাকব, দুজন দুজনের পরামর্শ-সহায়তা প্রয়োজন হয়। তবে আসল বোঝাপড়াটা হয় মাঠের খেলা দিয়েই। জাতীয় দলে আমরা একসঙ্গে দীর্ঘদিন খেলেছি। একে অপরের জানার কিছু বাকি নেই।’
মাশরাফি-রাজ্জাকের মতো দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সাফল্য। দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে বেশ খুশি কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী, ‘ওদের ওপর নির্ভর করা যায়। দলীয় সংহতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে তারা। নিজেদের স্কিল তো আছেই। তরুণদের ভেতর থেকে খেলা বের করে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাশরাফি-রাজ্জাক বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন বহু স্মরণীয় মুহূর্ত। এবার তাঁরা সাফল্য উপহার দিতে চান কলাবাগান ক্রীড়াচক্রকেও।