খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৬: পাঁচ ম্যাচের গোল খরা কাটিয়ে ৫০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছালেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেটা উদযাপনের কোনো উপলক্ষ পেলেন না আর্জেন্টিনার এই তারকা ফরোয়ার্ড। এর আগেই যে ভালেন্সিয়ার কাছে দুই গোল খেয়ে বসেছে বার্সেলোনা।
কাম্প নউতে শেষ পর্যন্ত ভালেন্সিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে এক সময় দৃষ্টির সীমানায় এসে পড়া লা লিগার শিরোপাটা ধরে রাখায় এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বার্সেলোনা।
লা লিগায় এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে হারল লুইস এনরিকের দল। এর আগের ম্যাচটি তারা করেছিল ড্র। ৪ ম্যাচে কাতালান ক্লাবটি মাত্র ১ পয়েন্ট পাওয়ায় তাদের ধরে ফেলেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। লিগের আর মাত্র পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতে দুই দলেরই পয়েন্ট ৭৬। আর এক সময় বার্সেলোনার চেয়ে ১২ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ এখন মাত্র ১ পয়েন্ট পেছনে।
রোববার রাতে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর প্রথম ১২ মিনিটে গোলের তিনটি চমৎকার সুযোগ পান ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর প্রত্যেকে।
ষষ্ঠ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে সুয়ারেসের পাস বুক দিয়ে নামিয়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন ফাঁকায় দাঁড়ানো মেসি। দারুণ দক্ষতায় মেসিকে ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোল করা থেকে ঠেকান ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক দিয়েগো আলভেস।
একাদশ মিনিটে বাঁ দিক থেকে জরদি আলবার নীচু ক্রসে পা লাগাতে পারলেই গোল পেতেন সুয়ারেস।
পরের মিনিটেই নেইমারের দর্শনীয় প্রচেষ্টা লাফিয়ে উঠে ঠেকিয়ে দেন আলভেস। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে লাফিয়ে উঠে নেওয়া শটে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠাতে চেয়েছিলেন ব্রাজিল অধিনায়ক।
২২তম মিনিটে কর্নার থেকে মাসচেরানোর মাথা হয়ে আসা বলে খুব কাছ থেকে সুয়ারেসের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। তিন মিনিট পর নেইমারের কাটব্যাক থেকে মেসির জোরালো শট ডানে ঝাঁপিয়ে এক হাতে ঠেকিয়ে আবারও ভালেন্সিয়ার রক্ষাকর্তা আলভেস।
খেলা দেখে মনে হচ্ছিল গোল সময়ের ব্যাপার; কিন্তু তা যে বার্সেলোনার জালে হবে তা কে ভেবেছিল! ২৬তম মিনিটে এল কাম্প নউকে স্তব্ধ করা গোলটি।
ম্যাচের ধারার বিপরীতে অনেকটা ভাগ্যের সহায়তায় এগিয়ে যায় ভালেন্সিয়া। বাঁ দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে পড়ে সীমানার কাছাকাছি থেকে গিলের্মে সিকেইরার শট রাকিতিচের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে ঢুকে যায়। বলে কোনোমতে হাত লাগাতে পারলেও কিছু করার ছিল না গোলরক্ষক ক্লাওদিও ব্রাভোর।
গোলের পর হতভম্ব সতীর্থ আর নিশ্চুপ গ্যালারির দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য চেচিয়ে জোর চেষ্টা করলেন বার্সেলোনার ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকে। তবে তাতে তেমন কাজ হলো না।
৩৯তম মিনিটে আবার হতাশা কাম্প নউয়ে। মেসির ফ্রি-কিক রক্ষণ দেয়ালে ফেরার পর বল পেয়ে উঁচিয়ে মেরেছিলেন জরদি আলবা। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নেওয়া মেসির হেড নীচু হয়ে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেন আলভেস।
যোগ করা সময়ে আবার বজ্রাঘাত কাম্প নউতে। প্রথম গোলটা ভাগ্যক্রমে হলেও দ্বিতীয় গোলটা যেন ‘বার্সেলোনার মতো’ করে করা। স্বাগতিকদের ডি-বক্সের বাইরে দুর্দান্ত কিছু পাসের পর দানি পাহেরোর বাড়ানো বল ডি-বক্সে পেয়ে কোনাকুনি শটে ব্রাভোকে পরাস্ত করেন তরুণ ফরোয়ার্ড সান্তি মিনা।
গত ডিসেম্বরে লিগের প্রথম পর্বের দেখায় নিজেদের মাঠে বার্সেলোনার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র ম্যাচেও ভালেন্সিয়ার গোলদাতা ছিলেন স্পেনের এই তরুণ ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে স্বভাবতই শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। তবে ভালেন্সিয়া পুরোপুরি রক্ষণাত্মক কৌশল নেওয়ায় ডি-বক্সে ঢুকেও গোলের ভালো কোনো সুযোগ তৈরি করা যাচ্ছিল না।
অবশেষে ৬৩তম মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলটি আসে মেসির ডান পা থেকে। বাঁ দিক থেকে জরদি আলবার নীচু ক্রসে বল জালে পাঠিয়ে ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোলের মাইলফলকে পৌঁছান পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
গত পাঁচ ম্যাচ গোলশূন্য থাকার পর এল বার্সেলোনার হয়ে ৪৫০তম গোলটি। ক্যারিয়ারের অন্য ৫০টি গোল মেসি করেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে।
৭৫তম মিনিটে আবারও ভালেন্সিয়াকে রক্ষা করেন আলভেস। এবার ইভান রাকিতিচের জোরালো শট ডানে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান তিনি।
৮৪তম মিনিটে নেইমারের জোরাল শট ভালেন্সিয়ার খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত আর অতিথিদের রক্ষণ ভেদ করতে পারেনি গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ীরা।
শেষ বাঁশি বাজার পর নিস্তব্ধ কাম্প নউ। আর ভালেন্সিয়ার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস যেন শিরোপা জেতার।
১৩ বছর পর লা লিগায় টানা তিনটি ম্যাচ হারলো বার্সেলোনা। এর আগে ২০০৩ সালের ফেব্র“য়ারিতে টানা তিনটি ম্যাচ হেরেছিল তারা।
আর ২০০৯ সালের মে মাসের পর এই প্রথম টানা চার ম্যাচ জয়শূন্য থাকলো কাতালান ক্লাবটি। ভালেন্সিয়ার কাছে এই হারের আগে রিয়াল মাদ্রিদ ও রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে হেরেছিল বার্সেলোনা। আর এই তিন হারের আগে ভিয়ারিয়ালের মাঠে ২-২ গোলে ড্র করেছিল তারা।
আগের ম্যাচে গ্রানাদাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্টের হিসেবে বার্সেলোনাকে স্পর্শ করে আতলেতিকো মাদ্রিদ। ভিসেন্তে কালদেরনে বিজয়ীদের গোল তিনটি করেন কোকে, ফের্নান্দো তরেস ও আনহেল কোরেয়া।
সমান ৩৩টি করে ম্যাচ খেলা বার্সেলোনা ও আতলেতিকোর পয়েন্ট ৭৬। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় শীর্ষেই থাকছে লুইস এনরিকের দল।
শনিবার অবনমন অঞ্চলে থাকা গেতাফেকে ৫-১ গোলে হারানো রিয়াল মাদ্রিদ ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে।