Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

27খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৬: বিগত আমলের মহাজোট সরকার থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ৭ বছরেও সংসদের ভেতরে কিংবা বাইরে সরকারবিরোধী তেমন কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কিংবা পর্যবেক্ষক, কিংবা বিএনপি বিরোধী কিংবা খোদ বিএনপিরই কেউ কেউ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করে থাকেন। একই সঙ্গে ‘বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে’ বলেও অনেকে মনে করেন। কিন্তু এ মতের বিপরীত মেরুতে রয়েছেন, বিএনপির এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাও কম নয়। বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম-এর মতে, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কখনোই দুর্বল নয়। একই সঙ্গে বিএনপি আন্দোলনে ফেল করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় আবদুস সালাম এ দাবি করেন। এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও কথা বলেন। আবদুস সালাম ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আবদুস সালাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনকে সহায়তা করতে সরকার বাধ্য। সেখানে সরকার ডিক্টেট করছে এখানে এটা কর, ওটা করতে হবে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও আওয়ামী লীগ দুটো ভিন্ন বিষয়। এখানে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ আর সরকার এক হয়ে গেছে।’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি, এটি একটি নির্দলীয়। দলীয়ভাবে কখনো এ নির্বাচন হয়নি। এবার এই সরকারদলীয় লাঠিয়াল বাহিনী সৃষ্টি করার জন্যই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ নির্বাচনকে ব্যবহার করেছে। যে কারণে দেখুন, অন্যবার নির্বাচনে এভাবে সেন্টার দখল হয়নি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো চেয়ারম্যান পাস করেনি। এর একটাই কারণ, যেহেতু তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়, সে জন্যই এলাকাভিত্তিক, ইউনিয়নভিত্তিক রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, জনগণের মুখ বন্ধ রাখার জন্য যাতে একটি বাহিনী তৈরি করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই তারা এটা করেছে। এগুলো করে কখনো পার পাওয়া যায় না। রাজনীতিতে হয়তো সাময়িক ধরে রাখা যায়।
তারা (ক্ষমতাসীনরা) জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বোঝাতে চায় বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা (বিএনপি) অন্যপন্থায় ক্ষমতায় যেতে চায়। আমি বলতে চাই, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। দেশে যে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। এখন যে সরকার ক্ষমতায় আছে, এটা ভোটারবিহীন সরকার। বিএনপি যদি নির্বাচনে (ইউপি নির্বাচন) না যেত, তাহলে বহু অপপ্রচার করা হতো। আওয়ামী লীগের অধীনে যে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন পারে না―সেটা প্রমাণ করার জন্য বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়াটা ফরজ ছিল। আরেকটা বিষয় হলো―যেখানে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচনে না যেত, তাহলে এই প্রতীকটা নিয়েও আরেকটা ষড়যন্ত্র করত। কাজেই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্যই বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং বিএনপি সফল হয়েছে।
সিটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পেরেছে। জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রতিটি সিটিতেই জয়ী হয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, সুতরাং এই নির্বাচনেও জনগণ তাদের ভোট দেবে না, সেই কারণেই তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। রাষ্টীয় সন্ত্রাসের সামনে, অস্ত্রের সামনে খালি হাতে কীভাবে দাঁড়াবেন?
বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কখনোই দুর্বল নয়, বিএনপির শক্তি হলে জনগণ। জনগণ বিএনপির পক্ষে আছে, আমাদের কিছু নেতাকে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে, হুলিয়া দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেই বিএনপি দুর্বল হয় না। এক-এগারো থেকে অনেক নির্যাতন হয়েছে, লাভ হয়নি। এটা বলতে পারেন―নির্যাতন নিপীড়নের সামনে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী রাস্তায় নামেন না। যখন এগুলো থাকে না, কোনো কর্মসূচি দিলেই কিন্তু বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসে। বিএনপি অবশ্যই শক্তিশালী দল।
আমি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব, আমরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়নি। বিএনপি আন্দোলনে ফেল করেনি। জোর করে তো আর আমরা বন্দুকের বিপরীতে বন্দুক ব্যবহার করতে পারব না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের প্রতি বিক্ষোভ জানাতে পারব। মিছিলের ওপর গুলি চালালে কে সামনে দাঁড়াবে? ঢাকা শহরের ভোট কেন্দ্রে কুকুর বসে আছে, ৫ ভাগ ভোট পড়েছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি, আমাদের সার্থকতা সেখানেই।
বিএনপি অবশ্যই কমিটি করবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে বলেছেন যে, কেন্দ্রীয় কমিটির পর ঢাকা মহানগর কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি করা হবে।