খোলা বাজার২৪, রোববার, ১ মে, ২০১৬: একশ ত্রিশ বছর আগে শ্রমিকরা নিজেদের রক্ত দিয়ে মে দিবসের গোড়াপত্তন করেছেন।কিন্তু এই সময়েওদেশে শিশু শ্রম প্রকট আকার ধারণ করছে। শুধু শ্রমিক হিসেবে খাটিয়ে শিশুদের রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে র্নিযাতন।
কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শিশু শ্রমিক মারধর এবং ৪৬ শতাংশ শিশুশ্রমিককে গালিগালাজের শিকার হতে হয়। যেসব শিশু শ্রমিক গৃহকর্মীর কাজ করছে, তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭ শতাংশ হয় ধর্ষণের শিকার।
গবেষণায় দেখা যায়, ৮০ শতাংশ শিশুর কর্মক্ষেত্রে কোনো ওভারটাইমের সুযোগ নেই। একইসঙ্গে ৩৫ শতাংশ শিশু শ্রমিকের জন্য তাদের কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের খাবার কিংবা সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকেনা।
বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এসি নিলসেন (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিচালিত ‘অসংগঠিত খাতে শিশু শ্রমের অবস্থা’ শীর্ষক সম্প্রতি হওয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে শিশু শ্রমের এমন অবস্থা উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণাটি যেসব শিশুর ওপর পরিচালনা করা হয়, তাদের ৪৪ শতাংশ ছিল ১০-১৪ বছর এবং ৪ শতাংশ শিশু শ্রমিকের বয়স ছিল ৫-৯ বছর এবং ৫২ শতাংশের বয়স ছিল ১৫-১৮ বছর। এসব শিশুর ৭৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে। বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত এসব শিশু শ্রমিক দৈনিক ১০ ঘণ্টার ওপরে কাজ করে। মাসে আয় করে মাত্র ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫ হাজার টাকা বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
পরিকল্পনায় নিরসন সম্ভব
জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ ২০১৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৭ লাখ শিশু শ্রমে নিয়োজিত। এদের মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু নিয়োজিত রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুলহক চুন্নু জানান, সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজের তালিকা করেছে। এসব কাজ শিশুরা করতে পারবেনা। এখন দেখতে হবে এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। অবশ্য শিশুশ্রম নিরসনে মানসিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভুঁইয়া এসডিজির (জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা)সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমের বিষয়টি কীভাবে সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ করেন।
শিশু শ্রম নিরসনে সব শিশুর জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দিয়ে নাজমুজ্জামান ভূইয়া বলেন, শুধু আইনের ভয় দেখিয়ে শিশু শ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। শিশু শ্রমের অনৈতিক ও অমানবিক দিকটি বুঝতে হবে।