খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ৬ মে ২০১৬: কাউন্সিলের পর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দখলের প্রতিযোগিতায় নেতাদের দ্বন্দ্বের মধ্যেই এবার মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়েও যন্ত্রনায় পড়েছে বিএনপি।
নির্বাহী কমিটি গঠনের পরই মহানগর কমিটি পূনর্গঠন করা হবে, বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এরই মধ্যে খোকা-আব্বাস সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। মহানগর বিএনপিও এখন বহু ভাগে বিভক্ত। এই পরিস্থিতিতে মহানগরের তৃণমূলে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
মহানগর কমিটি প্রভাবশালী নেতৃদ্বয়ের বলয়মুক্ত হয়ে তরুণদের দিয়ে গঠন করা হবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায়ও রয়েছে দলটি।
দলীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর ঢাকা মহানগর কমিটিতেও হাত দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এর আগেই আব্বাস-খোকার সেই পুরোনো দ্বন্দ্ব আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দলের প্রভাবশালী এই দু’জনের সরকার বিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতার দায়ে আর মহানগরের নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। তবে তারা নিজেরা নেতৃত্বে না এলেও তাদের অনুসারী যেন নেতৃত্বে আসে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন তারা।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবিষ্যত সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরই ঢাকা মহানগর কমিটিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অতীতের ব্যর্থতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এবং বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা মহানগর বিএনপিকেও উত্তর ও দক্ষিণ-এই দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে।
এছাড়া পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির বাস্তবায়ন করতে হলেও ঢাকা মহানগর কমিটিতে পরিবর্তন আনতেই হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মির্জা আব্বাস (স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক) এবং হাবিব উন নবী খান সোহেল (বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের মহানগর পদ হারাতে পারেন।
এ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতার এক পদের বেশি পদে থাকার এখতিয়ার নেই। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনিবার্য কারণে কাউকে একাধিক পদে রাখা যাবে। নির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে কেউ একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। তবে নির্বাহী কমিটি গঠন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহানগর কমিটিতে বর্তমান নেতৃত্বই দায়িত্বে থাকছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এরপর মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। একইসঙ্গে চার সিনিয়র নেতাকে দিয়ে করা হয় একটি উপদেষ্টা কমিটিও।
প্রথম দফা আন্দোলনের ব্যর্থতার পর আব্বাস-সোহেল কমিটিকে ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিলো আকাশচুম্বি। নতুন কমিটির নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরে তুমুল আন্দোলনে সরকার পতন হবে, সেই বিশ্বাস ধারন করলেও আবারো স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। আন্দোলন শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ সিনিয়র নেতারা। ফলে আন্দোলন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।
দলীয় সূত্র বলছে, অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার ঢাকা মহানগর বিএনপিকে পুরোই ঢেলে সাজাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে বড় ধরনের চমক থাকছে। বিশেষ করে মহানগর বিএনপিতে আসছে একদল তরুণ নেতৃত্ব। একই সঙ্গে দুই ভাগ হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদলেই মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নামে থাকবে আলাদা কমিটি। এতে ঢাকা মহানগর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। বিএনপির হাউকমান্ডেরও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভব রয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের আগেই খোকা ও আব্বাস সমর্থকরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কারণ, নেতৃত্ব না থাকলেও মহানগরের রাজনীতি হাতছাড়া করতে চান না এই দুই নেতা। যে কোনোভাবেই নিজের আস্থাভাজনদের নেতৃত্বে দেখতে চান তারা। তবে মহানগর বিএনপির একটি অংশও মনে করেন, ঢাকার রাজনীতিতে প্রভাবশালী এ দুই নেতার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ সংগঠনের জন্য ইতিবাচকই হবে।
সূূত্র বলছে, মহানগর কমিটি গঠনের আগে যেসব ওয়ার্ডে এখনও নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি সেসব জায়গায় দ্রুত কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে আব্বাস-খোকা সমর্থকদের মুখোমুখি অবস্থানে আবারো সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বাধ্য হন দলটির হাইকমান্ড। এই পরিস্থিতিতে মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে মহাযন্ত্রণায় আছে দলটি।
মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা জানান, বিএনপির মহানগর কমিটির রাজনীতি এখন বহু ভাগে বিভক্ত। এখানে এখন ভাইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। এক ভাইয়ের কথা না রাখলে আরেক ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়। অবস্থা এমন যে, কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি।
পুরোনোদের ছেটে ফেলে মহানগরে নতুন নেতৃত্ব আনার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘মহানগরের দুটি কমিটিতেই আমি ছিলাম। আন্দোলন সফল করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার দায় আমারও আছে। সুতরাং নতুন নেতৃত্ব আনা প্রয়োজন। নতুন যোগ্য অনেক লোকই আছে।’
দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তরে সভাপতি হিসেবে সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। আব্বাস ও খোকা দুজনের সঙ্গেই কাইয়ুমের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। উত্তরে সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান, কাজী আবুল বাশারের নামও আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে খোকার সমর্থক আবদুস সালামের নামও আলোচনায় রয়েছে। খোকা বলয়ের নেতা হিসেবে সালাম ব্যাপকভাবে পরিচিত। তবে সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য দক্ষিণের সভাপতি পদে নামের তালিকায় উঠে এসেছে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নাম। তবে ‘এক নেতার এক পদ’ এই নীতির কারণে সোহেলকে নিয়ে সংশয় আছে। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নবী উল্লাহ নবী এবং আবু সাঈদ খানের নামও আলোচনায় আছে। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্বাস সমর্থক সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদ হারুনের নামও আলোচনায় রয়েছে।