খোলা বাজার২৪,শনিবার, ৭ মে ২০১৬: সম্প্রতি যুদ্ধাবস্থার কারণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে লিবিয়ার শ্রমবাজারে। দেশটির পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিরাও রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক হলেই কেবল দেশটিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে, এমনটিই জানানো হয়েছে।
এরমধ্যেও থেমে নেই লিবিয়ায় গমন। অবৈধপথে কর্মী যাচ্ছে হরহামেশা। মানব পাচারে নতুন রুট তৈরি হয়েছে। দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও প্রতারিত হচ্ছে মানুষ। আর এজন্য দালালরা গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সুদান হয়ে লিবিয়ায় পাঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সম্প্রতি প্রতারিতদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯ দালালকে চিহ্নিত করেছে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশী দূতাবাস। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীদের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুকে এক দালালের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় দালাল সিন্ডিকেটের হাতে প্রতারিত হয়ে বাংলাদেশীরা এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এদের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। র্যাব-৩ বিষয়টি দেখছে বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান। সমপ্রতি লিবিয়ার যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সুযোগে দেশি-বিদেশি দালাল সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দেশটিতে লোক পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তৈরি করেছে মানবপাচারের নতুন রুট। বাংলাদেশ থেকে সুদান হয়ে লিবিয়া। এই পথে লিবিয়া পৌঁছতে সময় লাগছে ১৫ দিন থেকে এক মাস। আর দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মুক্তিপণও আদায় করছে তারা। এই ঘটনার শিকার হয়ে অবৈধভাবে লিবিয়ায় গমনকারীরা বিভিন্ন সময় দূতাবাসে অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ১৯ দালালকে চিহ্নিত করেছে দূতাবাস।
গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার বাংলাদেশী দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘সমপ্রতি সুদান হয়ে মানবপাচারকারীদের সহায়তায় বাংলাদেশীরা অবৈধভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করছেন। তারা লিবিয়ায় প্রবেশের পর আজদাবিয়ায় সংঘবদ্ধ বাংলাদেশী দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হচ্ছেন এবং নির্যাতন এড়াতে পরিবারের নিকট হতে দালালদের অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটি ছবি প্রকাশ করে ফেসবুকের ওই পোস্টে বলা হয়েছে ছবিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি এই চক্রের একজন মূলহোতা- যিনি অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, নির্যাতন ও হত্যা প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আজদাবিয়ার বাংলাদেশী দালালদের সংঘবদ্ধ এই চক্রের অপতৎপরতা বন্ধের জন্য তাদের লিবীয় ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, বাংলাদেশে স্থায়ী ঠিকানা ও নিকটাত্মীয়ের পরিচয়সহ বাংলাদেশের মোবাইল নম্বর জানা অতি জরুরি। এ প্রেক্ষিতে লিবিয়ায় অবস্থিত সকল প্রবাসীকে ছবিতে প্রদর্শিত ব্যক্তিসহ সকল দালাল সম্পর্কে তথ্য জানা থাকলে তা দূতাবাসকে জানাতে বলা হয়েছে।
দূতাবাস প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। এরা হলো- কুমিল্লার সবুজ, আনোয়ার, নাসির, অঞ্জন, যশোরের মুরাদ, ফেনীর কানা আনোয়ার, ফরিদপুরের নাসির, ঝিনাইদহের আলী, টাঙ্গাইলের লাল মিয়া, মুন্সীগঞ্জের জালাল, রাজীব, সজীব, চাঁদপুরের নাসির, বরিশালের সবুজ, রফিক, মিরাজ, নরসিংদীর বাসেদ, আলমগীর, গাজীপুরের রাজীব। দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এসব দালালের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে র্যাব-৩ এর অপারেশন অফিসার আবদুল কাদের বলেন, তারা নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে কাজ করেন। গত মার্চ মাসের প্রথমদিকে দালালরা লিবিয়ার বেনগাজীতে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করে। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকায় ৭ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা হয়। তালিকা প্রকাশ করা এই ১৯ জনের ব্যাপারে তিনি বলেন তাদের ব্যাপারে এখনো কোন তথ্য আসেনি।
তবে দূতাবাসের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এদিকে গত ২রা এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বাংলাদেশি লিবিয়া যেতে পারবে না। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।